Abekta

Nothing human is alien to me

User Tools

Site Tools


সোলার সিস্টেম

সূর্য আর তার গ্র্যাভিটির অধীনে থাকা সব অব্জেক্ট নিয়ে সোলার সিস্টেম। এখানে আছে আটটা গ্রহ, কয়েক ডজন ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট, শত শত মুন, গ্রহাণু, আর ধূমকেতু। এই সিস্টেমের একেক গ্রহ একেক রকম, এস্টারয়েড ও কমেটেও অনেক বৈচিত্র্য। পুরো সিস্টেমটাকে আবার ঘিরে রেখেছে কোটি কোটি বরফের টুকরা দিয়ে তৈরি বিরাট ওর্ট ক্লাউড। কিন্তু সব বৈচিত্র্য ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠে সৌরজগতের অন্তর্নিহিত অর্ডার। এর বেশির ভাগ জিনিস একটা চিকন ডিস্কের মধ্যে সূর্যের চারদিকে প্রায় একই দিকে ঘুরছে। যাদের রেভলুশনের পাশাপাশি রোটেশন আছে তাদের দুই গতির দিকও একই। এই অর্ডার থেকে আন্দাজ করা যায় আমাদের সিস্টেম কিভাবে সাড়ে চার বিলিয়ন বছর আগে গ্যাস ও ডাস্টের এক বিরাট মেঘ থেকে জন্ম নিয়েছিল। সেই ক্লাউডের গতির চিহ্ন রয়ে গেছে মেঘ থেকে অনেক আগে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে জন্মানো প্রত্যেকটি অব্জেক্টে।

সোলার সিস্টেমের প্রায় কেন্দ্রে আছে সূর্য, যার ভর এই সিস্টেমের অন্য সবকিছুর ভরের যোগফলের চেয়েও ৭০০ গুণ বেশি। আমাদের এই তারা মূলত ৭১% হাইড্রোজেন ও ২৭% হিলিয়াম দিয়ে তৈরি এক গ্যাসের গোলক। তবে তার মধ্যে অন্য সব কেমিকেল এলিমেন্টও আছে সামান্য পরিমাণে বায়বীয় অবস্থায়।

সূর্যের সবচেয়ে কাছে পাওয়া যায় চারটা ইনার প্ল্যানেট (বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল), যাদের অর্বিট উপরের ফিগারে নিচের ডান কোণায় দেখানো হয়েছে। এরা মূলত রক দিয়ে তৈরি এবং এদের এটমস্ফিয়ার হয় খুব থিন নয় একেবারেই নেই। চারটা আউটার প্ল্যানেটের (জুপিটার, স্যাটার্ন, ইউরেনাস, নেপচুন) অর্বিট নিচে বামে দেখানো হয়েছে, যদিও জুপিটারের অর্বিট ডানেও বড় করে দেখা যাচ্ছে। এরা মূলত গ্যস ও তরল দিয়ে তৈরি, ইনার চার গ্রহের চেয়ে অনেক বড়, এবং এদের হাইড্রোজেনে ভরা বায়ুমণ্ডল অনেক পুরু। জুপিটারের ব্যাস পৃথিবীর দশ গুণ, আর ভর ৩১৮ গুণ। ইনার গ্রহদের অনেক সময় টেরেস্ট্রিয়াল প্ল্যানেট বলা হয় কারণ তারা পৃথিবীর মতো, আর আউটার গ্রহরা জুপিটারের (জোভ) মতো হওয়ায় অনেক সময় জোভিয়ান প্ল্যানেট নাম পায়।

এছাড়া সৌরজগতে আছে অনেক ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট, যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ চাঁদের চেয়েও ছোট প্লুটো। প্লুটোর অর্বিট সৌরজগতের ডিস্ক থেকে অনেক উপর ও নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। এর চেয়ে বড় ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট এরিস সূর্যের আরো কাছে অবস্থিত। ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট দেখতে গ্রহের মতোই প্রায় স্ফেরিকেল, কিন্তু গ্রহের মতো তারা স্বাধীন সার্বভৌম অর্বিট তৈরি করতে পারেনি।

এছাড়া বেশির ভাগ গ্রহের চারদিকে আছে উপগ্রহ, যাদেরকে এখন আমাদের চাঁদের নামে মুন ডাকা হয়। বৃহস্পতি ও শনির আছে ষাটের বেশি মুন, ইউরেনাসের সাতাশটা, নেপচুনের চৌদ্দটা, মার্সের দুইটা, পৃথিবীর একটা; শুধু ভেনাস ও মার্কারির কোনো মুন নেই।

গ্রহ উপগ্রহের চেয়ে অনেক ছোট লক্ষ কোটি বস্তু আছে সৌরজগতে। এস্টারয়েড মূলত রক ও মেটাল দিয়ে তৈরি। ভর কম হওয়ায় এরা গোলাকার হতে পারেনি। সবচেয়ে বড় এস্টারয়েড ভেস্তা ডিমের মতো, লম্বায় প্রায় পাঁচশ কিমি, যেখানে পৃথিবীর ব্যাস বারো হাজার কিমি, চাঁদের সাড়ে তিন হাজার কিমি। আমাদের কাছের রকি গ্রহাণুরা মার্স ও জুপিটারের মাঝখানে এস্টারয়েড বেল্টে (ফিগারে নিচে ডানে) থাকে, যেখানে কয়েক লক্ষ গ্রহাণু আছে। কিছু গ্রহাণু জুপিটারের অর্বিটেও পাওয়া যায়, যাদের নাম ট্রোজান।

নেপচুনের চেয়ে দূরে কাইপার বেল্টের (ফিগারে নিচে বামে) মধ্যেও কিছু এস্টারয়েড আছে, কিন্তু সেখানের বেশির ভাগ বস্তু আইসি বডি, ছোট ছোট বরফের টুকরা। তবে সবচেয়ে বেশি আইসি বডি আছে ওর্ট ক্লাউডে যার স্কেল ফিগারটির উপরের প্যানেলে দেখানো হয়েছে। কাইপার বেল্ট সূর্য থেকে মাত্র ৫০ এইউ দূরে, কিন্তু ওর্ট ক্লাউডের শেষ প্রান্তের দূরত্ব ১ লাখ এইউ, বা প্রায় ১ লাইটিয়ার। এই দুই বেল্টের মধ্যে প্রায় এক ট্রিলিয়ন আইসি বডি থাকতে পারে, যাদের সাইজ গড়ে দশ কিমি। এরাই যখন বিরাট এলিপ্টিকেল অর্বিটে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের কাছে আসে, তখন আমরা তাদেরকে কমেট ডাকি। সূর্যের তাপে গলা বরফ দিয়েই তৈরি হয় ধূমকেতুর লেজ।

সূর্যের সোলার উইন্ড অবশ্য ওর্ট ক্লাউড পর্যন্ত যেতে পারে না, কাইপার বেল্ট ক্রস করার পর ইন্টারস্টেলার উইন্ডের চাপে যেখানে থেমে যায় সেই সীমান্তের নাম হেলিওপজ। হেলিওপজের সামনেই সোলার ও স্টেলার উইন্ডের সংঘাতে একটা বো শক তৈরি হয় মিল্কিওয়ের কেন্দ্র ঘিরে সূর্যের চলার দিকে, যা উপরের ফিগারে নিচে বাম কোণায় দেখানো হয়েছে। এই পর্যন্তই আমাদের হেলিওস্ফিয়ারের ব্যাপ্তি।

bn/un/solar-system.txt · Last modified: 2024/10/03 10:28 by asad

Donate Powered by PHP Valid HTML5 Valid CSS Driven by DokuWiki