- English
- বাংলা
Table of Contents
This is an old revision of the document!
১. পার্টিকেল যুগ
সক্রেটিস: ব্রহ্মপুত্রের জন্ম হিমালয়ের উত্তর ঢালে চিমায়ুংডুং ও আংসির মতো কিছু গ্লেসিয়ার থেকে, যারা এই মানস সরোবর থেকে মাত্র ৭১ কিমি পূর্ব দিকে। এসব গ্লেসিয়ার থেকে অনেক নদীই বের হয়ে এক স্রোতে মিশে সাংপো নদী তৈরি করে। একটা নদীর উৎস বের করা যত কঠিন, ইউনিভার্সের উৎস বের করা তার চেয়ে অন্তত ২৪ গুণ কঠিন।
রবি: বুঝলাম যে তুমি কাজটা সহজ করার জন্য শুধু আংসির উপর ফোকাস করতে চাচ্ছ। কিন্তু মহাবিশ্বের পার্টিকেল যুগের বর্ণনা সহজ করা এত সোজা হবে না। পার্টিকেল ফিজিক্সের স্ট্যান্ডার্ড মডেল গাণিতিকভাবে না বুঝলে এটা বুঝা সম্ভব না।
সক্রেটিস: প্রাচীন ইন্ডিয়ানরা বলত, মহাবিশ্বের ভিত্তি হলেন ব্রহ্ম, ব্রহ্মের মন থেকে তৈরি হয়েছে মানস সরোবর, আর ব্রহ্মের ছেলে হলেন ব্রহ্মপুত্র। মানস সরোবরে এত বার এসেও জুনো যেহেতু ব্রহ্মের মন বুঝতে পারেনি, সেহেতু মনে হয় না আমরাও স্ট্যান্ডার্ড মডেলের গাণিতিক রূপ বুঝতে পারব, তা তোমার সাথে যতই কথা বলি।
জুনো: এত কথা বাদ দিয়ে সবাই চলো ব্রহ্মপুত্রের কথিত উৎসে চলে যাই। বরফের উপর বসে কথা বললে আশাকরি রবির আগুন কিছুটা কমবে।
সক্রেটিস: কোথায় এই ‘কথিত’ উৎস?
হার্মিস: ল্যাটিচুড ৩০.৩৪৮, লঙ্গিচুড ৮২.০৪৫, মানে বিষুবরেখা থেকে ৩০ ডিগ্রি উত্তরে, আর ইংল্যান্ডের গ্রিনিচের উপর দিয়ে যাওয়া প্রাইম মেরিডিয়ান থেকে ৮২ ডিগ্রি পূর্বে। মনে রাখতে হবে বিষুবরেখা থেকে উপরে উত্তর মেরু পর্যন্ত দূরত্ব ৯০ ডিগ্রি, আর প্রাইম মেরিডিয়ান থেকে বিষুবরেখা বরাবর পুরা পৃথিবী ঘুরে আবার গ্রিনিচে ফিরে আসলে মোট ৩৬০ ডিগ্রি দূরত্ব অতিক্রম করা হয়। তাহলে ৩০ ডিগ্রি হলো নব্বইয়ের তিন ভাগের এক ভাগ, আর বিরাশি ডিগ্রি হলো ৩৬০ ডিগ্রির চার ভাগের প্রায় এক ভাগ।
[হার্মিসের অদরকারি কথা শোনার সময় সবাই উড়াল দিয়ে চলে আসে আংসি নদীর উৎসে। আংসির তীরে বরফের উপরে বসে সবাই রবির কাছে শোনে পার্টিকেল যুগের কথা।]
1. বিগব্যাং থেকে স্পেসটাইম
সক্রেটিস: বিগব্যাং থিওরি, অর্থাৎ কসমোলজির স্ট্যান্ডার্ড মডেল বলে, আমাদের মহাবিশ্ব, মানে আমরা সবাই, প্রায় ইনফিনিটলি ক্ষুদ্র একটা বিন্দু থেকে এসেছি। দুই বিন্দুবাসিনী নিয়ে বোর্হেসের কমেডি মনে আছে তো! এখন থেকে প্রায় চৌদ্দ বিলিয়ন বছর আগে এক বিন্দু থেকে স্থানকাল প্রসারিত হতে শুরু করেছিল, এই ঘটনার নাম বিগ ব্যাং। বিগব্যাঙের বিস্ফোরক এনার্জির কারণে এই প্রসারণ এখনো চলছে, আমাদের মহাবিশ্ব এখনো দিন দিন বড় হচ্ছে। কিন্তু এই কথা আমি অলিম্পাসের দেবতাদেরকে যখনি বলতে যাই তারা প্রশ্ন করেন, এই বিগব্যাঙের আগে কি ছিল বা এই বিগব্যাং কিভাবে হলো? দেবতারাই যদি এমন প্রশ্ন করে, নশ্বরদের কি হবে?
রবি: স্পেসটাইমের জন্মই যদি বিগব্যাঙের সময় হয়ে থাকে তাহলে, বিগব্যাঙের আগে কি ছিল, বা বাইরে কি ছিল সেই প্রশ্নের কোনো অর্থ থাকে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিগব্যাং থেকে তৈরি আমাদের স্পেসটাইম ছাড়া আসলেই কি আর কোনো স্পেসটাইম থাকতে পারে না? এমনকি হতে পারে যে প্রকৃতি আসলে একটা মাল্টিভার্স যেখানে অনেক বা অসীম সংখ্যক চারমাত্রিক ইউনিভার্স আছে? স্থানের তিন মাত্রা ও সময়ের এক মাত্রা একসাথে করে আমরা যে চার মাত্রা চিন্তা করছি তার বাইরে কি কিছু নাই? আমাদের চারটা মাত্রার জন্ম কি আরো বেশি মাত্রার অন্য এক জগৎ থেকে হতে পারে? এসবের উত্তর আমরা এখনো জানি না, জানার চেষ্টা হিসেবে অনেক গাণিতিক থিওরি বানানো হয়েছে, কিন্তু কোন থিওরি বা মডেল সঠিক তা অব্জার্ভেশনের মাধ্যমে এখনো প্রমাণ করা যায়নি। স্ট্রিং থিওরিতে অনেক মাত্রা ইউজ করা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
সক্রেটিস: বুঝলাম যে বিগব্যাঙের পরে কি হয়েছে আমরা জানি, কিন্তু স্বয়ং বিগব্যাঙের কারণ বা গাণিতিক ভিত্তি এখনো অজানা। গাণিতিক থিওরিগুলা কি ইউনিভার্সের অংশ, না বাইরে থেকে ইউনিভার্সের উপর চাপিয়ে দেয়া আইন?
রবি: ভালো প্রশ্ন। তোমার স্টুডেন্ট প্লেটো আর তার স্টুডেন্ট এরিস্টটল এটা নিয়ে যে বিতর্ক শুরু করে গিয়েছিলেন তা এখনো চলছে। রজার পেনরোজের বানানো এই ফিগার দিয়ে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যায়। প্রকৃতিতে বা বাস্তবতায় তিনটা জগৎ কল্পনা করা যায়: গাণিতিক, ফিজিকেল, মানসিক। গাণিতিক জগতে অসংখ্য জিনিস আছে (গণিতের সবকিছু), কিন্তু তার সামান্য কয়েকটা (যেমন, ফিজিক্সের মৌলিক তত্ত্ব) পুরা ফিজিকেল জগৎ তৈরি করে, বা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ছবিতে ‘1’ দিয়ে চিহ্নিত তীরের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। একইভাবে ফিজিকেল জগতে অসংখ্য জিনিস আছে (গরিলা থেকে গ্যালাক্সি), যার সামান্য কয়েকটা (যেমন, আমাদের ব্রেইন) পুরা মানসিক জগৎ তৈরি করে, বা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ‘2’ দিয়ে দেখানো হয়েছে। এবং মানসিক জগতেও অসংখ্য জিনিস আছে (সব প্রাণীর সব চিন্তা), যার সামান্য কয়েকটা (থিওরিস্টদের কিছু চিন্তা) গাণিতিক জগৎকে ধারণ করতে পারে, যা ‘3’ দিয়ে দেখানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই চক্রে কোন জগৎটা প্রথম, কোন জগৎ থেকে বাকি দুই জগতের জন্ম বা শুরু, না কি তিনটাই একসাথে থাকে? প্লেটোর মতে গাণিতিক বা ফর্মাল জগৎ থেকে সবকিছুর শুরু, এরিস্টটলের মতে সবার আগে ফিজিকেল জগৎ, আর বিশপ বার্কলির মতে মানসিক জগৎ থেকে সবকিছুর জন্ম।
সক্রেটিস: তার মানে প্লেটো মনে করত ইউনিভার্স না থাকলেও সব থিওরি থাকবে, কারণ থিওরি ইউনিভার্সের বাইরে আলাদাভাবে গাণিতিক জগতে থাকে।
রবি: হ্যাঁ। আর এরিস্টটলের মতে থিওরি হচ্ছে ইউনিভার্সের বিভিন্ন ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য মানুষের বানানো মডেল। মহাবিশ্ব না থাকলে তত্ত্বও থাকবে না।
সক্রেটিস: আমাদের ইউনিভার্সের ক্ষেত্রে কিন্তু এরিস্টটলের বস্তুবাদই সবচেয়ে সঠিক মনে হয়।
রবি: সেটা তোমার নিজস্ব চয়েজ। আমি প্লেটোবাদী। ম্যাথের বিউটি আর থিওরির অর্থ যে বুঝতে পেরেছে তার পক্ষে ম্যাথ ছাড়া অন্য কিছুকে উৎস ভাবা সম্ভব না।
সক্রেটিস: আচ্ছা, তাহলে এই তিন জগৎ মিলিয়ে বাস্তবতার মৌলিক গাঠনিক উপাদান কি কি বলা যায়?
রবি: অবশ্যই স্টেমিক, মানে স্পেস, টাইম, এনার্জি, ম্যাটার, ইনফর্মেশন, ও চেতনা।
সক্রেটিস: তোমার ম্যাথ কোথায়?
রবি: ম্যাথের সবকিছু ওই ইনফর্মেশনের ভিতরে আছে।
সক্রেটিস: চেতনা আলাদা করার কি দরকার ছিল? মানসিক সবকিছুও তো ইনফর্মেশনের মধ্যে পড়ে।
রবি: অনেক কগ্নিটিভ বিজ্ঞানীই মনে করেন চেতনা অন্য টাইপের জিনিস, ইনফর্মেশন না। কিন্তু সেটা অন্য বিতর্ক। আমাদের প্রথমে ফোকাস করা উচিত স্টেমিকের শুধু ‘স্টেম’ নিয়ে, মানে স্পেস, টাইম, এনার্জি ও ম্যাটারের উপর।
সক্রেটিস: এই চারটা একসাথে ব্যাখ্যা করা যায় রেলেটিভিটি দিয়ে, কিন্তু কেবল অনেক বড় স্কেলে। অনেক ছোট এটমিক বা সাবেটমিক স্কেলে রেলেটিভিটি খাটে না, সেখানে এনার্জি ও ম্যাটার ব্যাখ্যা করতে হয় কোয়ান্টাম থিওরি দিয়ে। কোয়ান্টাম তত্ত্বের সাথে জেনারেল রেলেটিভিটি মিশিয়ে যদি একটা থিওরি বানানো যায় তাহলে স্টেম সব স্কেলেই একসাথে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। একটা থিওরি অফ এভ্রিথিং (টো) বানানোর চেষ্টা অনেক ফিজিসিস্ট এখনো করে যাচ্ছেন, তুমিও তাদের একজন না কি?
রবি: আমি এখনো মনে করি স্ট্রিং থিওরির ভবিষ্যৎ কোনো একটা ভার্সন সবকিছু ইউনিফাই করতে পারবে। কিন্তু সেটা অবশ্যই তোমরা বুঝবে না। বরং আমাদের এখন দেখা উচিত ইউনিফাই করা মানে কি, আর টো’র মধ্যে এই ‘এভ্রিথিং’ আসলে কি?
সক্রেটিস: তাহলে আমাদেরকে বলো এভ্রিথিং মানে কি, আর ইউনিফাই করা মানে কি।
2. এনার্জির জন্ম
3. ম্যাটারের জন্ম
4. ফোটনের পটভূমি
5. লাইট, কালার, টেলিস্কোপ