মানুষের প্রায় মিলিয়ন বছরের আকাশ দেখার ইতিহাসে মাত্র ২টা নভোযান সূর্যের বাতাস দিয়ে তৈরি বাবলের বাইরে এমন বৈজ্ঞানিক যন্ত্র নিয়ে যেতে পেরেছে যা আসলেই কাজ করে।

যমজ নভোযান ভয়েজার ১ ও ২ কে ১৯৭৭ সালে এক এপিক অভিযানে পাঠানো হয়েছিল দূরের গ্রহদের দিকে; দুজনেই বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের নাগাল পেয়েছিল, তবে এর পর ইউরেনাস ও নেপচুনের কাছে যায় শুধু ভয়েজার ২। দুই জনই দিন দিন আরো দূরে যাচ্ছে, যদিও সময়ের সাথে তাদের যন্ত্রের বয়স বাড়ছে, ক্ষমতা কমছে। ভয়েজার ১ টার্মিনেশন শকে পৌঁছায় ২০০৪ সালে, যখন থেকে শুরু হয় তার ইন্টারস্টেলার অভিযান। ভয়েজার ২ একই সীমান্ত অতিক্রম করে ২০০৭ সালে।

তারপর গত আঠার বছর ধরে সূর্যের সরাসরি প্রভাবের বাইরে, অর্থাৎ হেলিওস্ফিয়ারের ওপারে সৌরজগতের প্রত্যন্ত এলাকা দেখতে কেমন তা আমাদেরকে সরাসরি জানাতে পারছে কেবল এই দুই যাত্রী। হেলিওস্ফিয়ারের বর্ডার এলাকা আর ইন্টারস্টেলার স্পেস নিয়ে অনেক নতুন পাজলের জন্ম দিয়ে এই যমজ দ্রুত ধেয়ে যাচ্ছে শূন্যতা ও মৃত্যুর দিকে। তাই বিজ্ঞানীরা এই এলাকার রহস্য সমাধানের নতুন উপায় উদ্ভাবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত যা জানে তা এমন: আমরা আর্থলিংরা সূর্যকে অনেক দূরের ছোট একটা বল মনে করি কারণ সূর্যের সবচেয়ে ভয়ংকর সব ঝড় থেকে আমাদের বায়ুমণ্ডল আমাদেরকে রক্ষা করে। কিন্তু সূর্য আসলে বিপুল পরিমাণ প্লাজমা ও ম্যাগ্নেটিজমের এক ফুটন্ত কুণ্ড, যার থেকে বের হওয়া শক্তিমান কণার দল প্রচণ্ড বেগে ছুটতে পারে সূর্য থেকে বিলিয়ন মাইল দূর পর্যন্ত। অসংখ্য কণার এই স্রোতের নাম সোলার উইন্ড, সৌর বাতাস। সোলার উইন্ডের সাথে সূর্যের ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডও বাইরের দিকে প্রবাহিত হয় এবং অনেক গ্রহের চুম্বকক্ষেত্রের উপর বিকট প্রভাব ফেলে। সূর্যের এক্টিভিটির উপর নির্ভর করে ১১ বছরের একটা সাইকেলে হেলিওস্ফিয়ারের আকার বাড়ে কমে।

সূর্যের এগার বছরের উঠানামার প্রভাব হেলিওস্ফিয়ারের সব জায়গায় আছে, এবং এস্ট্রোনমারদের সব অব্জার্ভেশনেও এই প্রভাব অনিবার্য। ভয়েজার যমজ হেলিওপজে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত আমরা এই অঞ্চলের ভিতরে এত স্তরের কথা জানতাম না, নিজের অজান্তেই আমাদের সব অব্জার্ভেশন স্তরে স্তরে বিকৃত হয়ে আসত।

ভয়েজার যমজ বিখ্যাত হয়েছিল একবার সূর্যের পাগলামির কবলে পড়ার কারণেই। স্পেসক্রাফট দুইটা যখন লঞ্চ করা হয় তখন প্রতি ১৭৬ বছর পরপর ঘটা একটা বিরল এলাইনমেন্টের সুযোগ নেয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তারা জুপিটার স্যাটার্ন ইউরেনাস নেপচুন চারটা গ্রহই এড়িয়ে যেতে পারবে।

ভয়েজাররা আবিষ্কার করেছিল, জুপিটারের মুন আয়ো দুঃস্বপ্নের মতো এক ভল্কানিক জগৎ, আমাদের ধূসর চাঁদের মতো নিরীহ না। ভয়েজার ১ দেখেছিল, শনি গ্রহের বড় উপগ্রহ টাইটান এক পুরু কুয়াশাচ্ছন্ন এট্মস্ফিয়ারে ঢাকা, যার বেশির ভাগটাই আমাদের গ্রহের মতো নাইট্রোজেনে তৈরি। ভয়েজার ২ এখন পর্যন্ত ইউরেনাস ও নেপচুনের পাশ ঘেঁষে যেতে পারা একমাত্র নভোযান। এই দুই গ্রহে সে দেখেছিল ভয়ানক বেগের বাতাস, এক ডজনেরও বেশি মুন, ছয়টা নতুন রিং, ইউরেনাসের অদ্ভুত বাঁকা ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড, আর নেপচুনে গ্রেট ডার্ক স্পট নামে বিখ্যাত হওয়া এক ঝড়। সোলার সিস্টেম আমাদের চোখে বদলে গিয়েছিল চিরতরে।

লঞ্চের আগেই এই মিশনের পোয়েট্রি নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সেগান প্রত্যেক নভোযানের সাথে যুক্ত করেছিলেন একটা করে গোল্ডেন রেকর্ড, মহাবিশ্বের অন্য সব বুদ্ধিমান প্রাণীর প্রতি আমাদের প্রতীকী ইশারা। আন্তঃনাক্ষত্রিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম এসব রেকর্ডে এনকোড করা ছিল ইউনিভার্সে আমাদের লোকেশন, পৃথিবীতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছবি, আর অসংখ্য ভাষার শুভেচ্ছা ও গান। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভয়েজাররা মহাশূন্যে ভেসে বেড়ানোর সময় যদি কোনো এলিয়েন এসব রেকর্ডের সন্ধান পায়, তাহলে দেখতে পাবে মানুষের ভালোবাসার মুরতি।

ইন্টারস্টেলার স্পেসে যাওয়ার পথে ভয়েজারদেরকে কয়েকটা বাউন্ডারি পার করতে হয়েছিল: প্রথমে সূর্য থেকে বারো-তের বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে টার্মিনেশন শক, যেখানে সোলার উইন্ড হঠাৎ স্লো হতে শুরু করে; তারপর হেলিওপজ, যেখানে বাইরের দিকে সোলার উইন্ডের চাপের সমান হয় ভিতরের দিকে ইন্টারস্টেলার মিডিয়ামের চাপ। এই দুই পরিষ্কার সীমান্তের মাঝখানে হেলিওশিথ, যেখানে সূর্যের বাতাস স্লো হতে থাকে, মাঝে মাঝে উল্টাও ঘুরে যায়। এক সীমান্ত থেকে আরেকটাতে যেতে যমজ দুইজনের মধ্যে বেশি বেগের ভয়েজার ১ সময় নিয়েছিল প্রায় আট বছর; হেলিওশিথ এতই বড়।

হেলিওপজের পরে শুরু হয় ইন্টারস্টেলার স্পেস, যেখানে ভয়েজার ১ ঢুকেছিল ২০১২ সালে, আর ভয়েজার ২ গিয়েছিল ২০১৮ সালে। সেখানের পরিবেশ আমাদের হেলিওস্ফিয়ারের চেয়ে অনেক আলাদা, আরো নীরব, কিন্তু আরো শান্ত না। যে পরিবেশ থেকে সৌরজগৎ জন্ম নিয়েছিল তার রেলিক এই ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম। এখানে আছে অনেক এনার্জির এটমের টুকরা, যাদের সাধারণ নাম কসমিক রে। অন্যান্য জিনিসের মধ্যে আরো আছে গত চৌদ্দ বিলিয়ন বছরে মারা যাওয়া অনেক তারার দেহ থেকে বের হওয়া ডাস্ট।

ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম গ্যালাক্সির একেক জায়গায় একেক রকম, মিল্কিওয়ের স্পাইরাল আর্মে এর ঘনত্ব পালাক্রমে কোথাও বাড়ে আর কোথাও কমে। আমাদের সূর্য তার বানানো পুরা বাবলটা নিয়ে এই মিডিয়াম ফুঁড়ে ঘুরতে থাকে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে। সূর্যের গতির সাথে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের ইন্টারেকশনের মধ্য দিয়ে হেলিওস্ফিয়ার তার আকৃতি পায়।

তবে এই আকৃতি ঠিক কি বিজ্ঞানীরা জানে না। কমেটের মতো হতে পারে, সূর্য যেদিকে যাচ্ছে সেদিকটা নাকের মতো ভোঁতা হতে পারে, আর বিপরীত দিকে একটা লম্বা লেজ থাকতে পারে। অথবা সূর্যের ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের সাথে ইন্টারস্টেলার মিডিয়ামের ইন্টারেকশনের কারণে বাবলটা ক্রয়সন্টের মতোও হয়ে যেতে পারে, মানে মাঝখানে মোটা সৌরজগৎ আর দুই দিকে দুইটা লম্বা লোব। অথবা আকৃতিটা বিজ্ঞানীদের কল্পনার বাইরেও হতে পারে; পৃথিবী থেকে একজাক্ট শেইপ বুঝা অনেক কঠিন, কারণ সৌরজগৎ একটা গোল বাটি হলে আমরা তার ভিতরের একটা ছোট্ট গোল্ডফিশের মতো।

আর ভয়েজার ভাইরা বাটি থেকে বের হয়ে বিশ্ব ঘুরতে চাওয়া মাছের মতো। তারা ১৯৮৯ সালের মধ্যে সব প্ল্যানেট পর্যবেক্ষণ এবং তাদের মূল মিশন শেষ করে ফেলেছিল, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য ভাঙেনি। নাসা তাদের চালিয়ে নিতে থাকে, তবে দেখার মতো আর গ্রহ না থাকায় প্ল্যানেটের ডেটা জোগাড়ের ইন্সট্রুমেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বিকল যন্ত্র নিয়ে ভয়েজার ভাইরা এখনো যাচ্ছে আমাদের কসমিক বাটির দেয়ালের দিকে।

তবে আমাদের এই দুই গোল্ডফিশ অলসভাবে ভাসছিল ভাবলে ভুল হবে। নাসা ২০০৮ সালে ইন্টারস্টেলার বাউন্ডারি এক্সপ্লোরার (আইবেক্স) পাঠিয়েছে, যা পৃথিবীর চারদিকে অর্বিট করতে করতে হেলিওস্ফিয়ারের শেষ প্রান্ত থেকে আসা নিউট্রাল এটম সংগ্রহ করে। বিলিয়ন মাইল দূরে কি হচ্ছে তা বুঝার জন্য এসব পরমাণু অনেক কাজে লাগে।

আইবেক্সের সবচেয়ে বড় অবদানের একটা এই: সে পুরা হেলিওশিথ জুড়ে ছড়ানো অনেক এনার্জির এটমের এক রিবন (ফিতা) খুঁজে পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা ভাবছে, হেলিওস্ফিয়ারের বাইরে থেকে ভিতরে বা ভিতর থেকে বাইরে বাউন্স করা কণাদের মাধ্যমে এই রিবন তৈরি হতে পারে। আমাদের বিশাল দুর্ভাগ্য যে ভয়েজার ভাইরা রিবনটা ছুঁতে পারেনি, এর দুই পাশ দিয়ে চলে গেছে। দুই ভাইয়ের যাত্রাপথের ফাঁকে মিস হয়ে গেল হেলিওশিথের সবচেয়ে উজ্জ্বল জিনিস।

এই প্রসঙ্গে স্পেস সায়েন্সের একটা বড় সমস্যার কথা চলে আসে। সূর্যের প্রভাবে থাকা এই বিশাল এলাকার ছবি ভয়েজারের মতো লোকাল পর্যবেক্ষকের পক্ষে তুলে আনা সম্ভব না। ভয়েজার ভাইরা বলা যায় হেলিওস্ফিয়ারের বায়োপ্সি করছে, একটা লোকাল স্যাম্পলের মাধ্যমে গ্লোবাল অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে। পুরা হেলিওস্ফিয়ারের গ্লোবাল ত্রিমাত্রিক রূপ উদ্ধার করার জন্য ভয়েজারদের মাত্র দুইটা ট্র্যাক যথেষ্ট না।

আইবেক্স আশার চেয়ে অনেক বেশিদিন ধরে কাজ করছে, এখনো এক্টিভ। এগার বছর ধরে অব্জার্ভেশন জড়ো করার কারণে তার মাধ্যমে এখন হেলিওস্ফিয়ারের উপর সোলার এক্টিভিটির প্রভাব বুঝা সম্ভব। তবে বিজ্ঞানীরা আরো ভালো রেজলুশনের আরেকটা স্পেস মিশনের পরিকল্পনা করছে, নাম ইন্টারস্টেলার ম্যাপিং এন্ড এক্সিলারেশন প্রোব, আইম্যাপ।

আইম্যাপের অর্বিটের কেন্দ্র হবে লাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট ১, পৃথিবী থেকে সূর্যের দিকে দেড় মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে। আইবেক্স যেসব নিউট্রাল এটম ধরার মাধ্যমে রিবন আবিষ্কার করেছিল আইম্যাপও তাই দেখবে, তবে অন্য দৃষ্টিকোণে। এসব এটমের নাম পিকাপ আয়ন, কারণ এরা ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম থেকে নিউট্রাল হিসেবে যাত্রা শুরু করে, সূর্যের কাছে এসে একটা চার্জ পিক-আপ করে, তারপর আবার ফিরে যায় হেলিওপজের দিকে। এর পাশাপাশি মরার আগে তারার দেহ থেকে ছিটকে পড়া যেসব ডাস্ট আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম থেকে সৌরজগতে অনধিকার প্রবেশ করে সেসবও আইম্যাপের টার্গেট। আইম্যাপ সূর্যের ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড আর সোলার উইন্ডের কাঠামো নিয়ে কাজ করবে চার্জের গতিবিধি বুঝার জন্য। এভাবে তৈরি হবে হেলিওস্ফিয়ারের আরো ভালো ম্যাপ।

অনেক বিজ্ঞানী আবার ভয়েজারের মতো যান দিয়ে হেলিওস্ফিয়ারের শেষ প্রান্ত থেকে সরাসরি ডেটা জোগাড়ের কথাও ভাবছে। ভয়েজারের পথ ধরে হেলিওস্ফিয়ার ক্রস করার জন্য ইতিমধ্যে আরেকটা যান দিন গুনছে: নাসা’র নিউ হরাইজনস মিশন, যে প্লুটো অতিক্রম করে ফেলেছে ২০১৫ সালেই। এই ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট ভালোভাবে স্টাডি করার পর ২০১৯ সালে সে আরো দূরের পাথুরে বস্তু এরকথ দেখেছে, হেলিওপজে পৌঁছাবে আগামী এক দশকের মধ্যেই। আশা করি ততদিন তার যন্ত্র সচল থাকবে।

আমেরিকানরা আরেকটা মিশন প্ল্যান করছিল ভবিষ্যতে লঞ্চ করার জন্য। ইন্টারস্টেলার প্রোব নামের এই যান ভয়েজার বা নিউ হরাইজনসের মতো সৌরজগতের ভিতরে বেশি সময় ব্যয় করবে না, বরং একটা অনেক শক্তিশালী রকেট কাজে লাগিয়ে খুব দ্রুত সোলার সিস্টেম থেকে বের হয়ে যাবে, প্ল্যানেটের বদলে তার টার্গেট হবে হেলিওস্ফিয়ারের শেষ প্রান্তে ও বাইরে প্লাজমা ও ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানীদের আশা ছিল সে এত দূর পর্যন্ত যেতে সক্ষম হবে যে উল্টা ঘুরে পুরা হেলিওস্ফিয়ারের আকৃতি একসাথে দেখে নিতে পারবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ডেকেডাল সার্ভেতে এই মিশনের অনুমতি দেয়া হয়নি। ইন্টারস্টেলার মিডিয়াম সরাসরি ডিটেক্ট করার ক্ষেত্রে তাই ইউএসএ’র চেয়ে এগিয়ে যেতে পারে চীন, যাদের ইন্টারস্টেলার স্পেসক্রাফটের পরিকল্পনা ইতিমধ্যে চলছে।

আপাতত মার্কিন স্পেস সায়েন্টিস্টদের ব্যস্ততার একটা বড় অংশ ভয়েজারের পাঠানো সিগ্নালের আরো ভালো প্রসেসিং। ডেটা যে খুব কম তা না, দুই দশক ধরে দুইটা যান সৌরজগতের সীমান্ত অতিক্রম করার পথে বিভিন্ন জায়গার খবর পাঠিয়েছে। কিছু অদ্ভুত ব্যাপারও ঘটেছে। একটা স্পেসক্রাফট পরপর পাঁচ বার টার্মিনেশন শক অতিক্রম করেছে। সম্ভবত সোলার উইন্ডের শক্তি উঠানামা করার কারণে বারবার টার্মিনেশনের শকের অবস্থান পাল্টাচ্ছিল, বলা যায় আসলে টার্মিনেশন শক এক ভয়েজার ভাইকে পাঁচবার ক্রস করেছে।

তবে ভয়েজারের আবিষ্কার ব্রেডক্রাম্বের মতো আরো দূরের এলাকার দিকে ইশারা করে। এতে উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন অনেক বেশি। যেমন, বিজ্ঞানীরা ভেবেছিল হেলিওস্ফিয়ারের তুলনায় ইন্টারস্টেলার মিডিয়ামের ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড অনেক আলাদা হবে, কিন্তু ভয়েজার তেমন বড় পরিবর্তন পায়নি। এই ২০২০ সালে ভয়েজার ১ একটা অদ্ভুত প্রেশার ফ্রন্টে পৌঁছেছে, মানে এমন এক জায়গা যেখানে জানা কোনো কারণ ছাড়াই ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড হঠাৎ বেড়ে গেছে।

ভয়েজার ভাইদের বয়স হচ্ছে। বয়সের দিক থেকে নাসা’র আর কোনো সচল নভোযান এদের ধারেকাছেও আসতে পারেনি। যারা ভয়েজার ডিজাইন করেছিল তারা হয়ত ভাবতেও পারেনি তাদের মৃত্যুর পরও দুই ভাই বেঁচে থাকবে। প্রতিটা যানের ভিতরে একটা করে নিউক্লিয়ার কোর আছে, যেখান থেকে ইন্সট্রুমেন্ট ও কমুনিকেশনের সব পাওয়ার আসে। কিন্তু এই পাওয়ার লঞ্চিঙের সময়ের তুলনায় এখন প্রায় অর্ধেক, দিন দিন আরো কমছে। গত কয়েক বছরে ভয়েজার একের সাথে যোগাযোগ অনেক বার ভেঙেছে, আর ভয়েজার দুইয়ের সাথে পৃথিবীর ওরিয়েন্টেশন একবার নষ্ট হয়েছে। জীবন শেষের দিকে। একটা সামান্য গ্লিচই এদের সাথে আমাদের যোগাযোগ চিরতরে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।


সায়েন্টিফিক এমেরিকান, এপ্রিল ২০২৫ সংখ্যায় সিনিয়র নিউজ রিপোর্টার মেগান বার্টেলসের লেখা’র মুক্ত অনুবাদ।