Abekta

Nothing human is alien to me

User Tools

Site Tools


This is an old revision of the document!


স্পিনোজা

স্পিনোজা ১৭–১৮ শতকে ইউরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক। তার প্রধান বই এথিক্স এবং থিওলজিকেল-পলিটিকেল ট্রিটিজ। ‘এথিক্সে’ তিনি জ্যামিতিক মেথডে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে গড আছেন এবং এই গডকে জানার চেষ্টা করাই মানুষের জন্য সর্বোত্তম গুড। তিন খণ্ডের প্রথমটাতে বলেন, গড ও নেচার একই জিনিস, খোদা ও প্রকৃতি একই জিনিস। গড বাস্তবতার ইউনিক অসীম অবশ্য-বিরাজমান সাবস্টেন্স। সাবস্টেন্স শুধু একটাই আছে, তা হলো গড।

খোদা ও প্রকৃতি

এরিস্টটলের মতে সাবস্টেন্স তাই যা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না, আর এট্রিবিউট সাবস্টেন্সের উপর নির্ভরশীল। যেমন ‘মানুষ’ ধারণাটা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না, তাই এটা সাবস্টেন্স। কিন্তু ‘ওজন’ সব সময় কিছু একটার ওজন, যে কিছু একটা হলো সাবস্টেন্স, তাই ওজন এক ধরনের এট্রিবিউট। দেকার্ত এর সাথে যোগ করেন, অসংখ্য সাবস্টেন্সের অসংখ্য পরিবর্তনশীল প্রপার্টি থাকলেও একটা প্রপার্টি কখনো পাল্টায় না: একটা সাবস্টেন্স দেহ হলে তার থাকে ‘ব্যাপ্তি’ আর মন হলে থাকে ‘চিন্তা’, সর্বদা। ব্যাপ্তি ছাড়া যেমন দেহ হয় না তেমনি চিন্তা ছাড়া মন হয় না। ব্যাপ্তির জন্য স্থান লাগে, চিন্তার জন্য লাগে না। দেকার্ত সাবস্টেন্সের এই দুই প্রধান বৈশিষ্ট্যকে বলেছিলেন এট্রিবিউট, আর পরিবর্তনশীল অন্য সব বৈশিষ্ট্যকে বলেছিলেন এই দুই এট্রিবিউটের মোড। দেকার্তের গড এক অসীম চিন্তা-সাবস্টেন্স, অন্য সব চিন্তা-সাবস্টেন্স ও ব্যাপ্তি-সাবস্টেন্স যার সৃষ্টি। স্পিনোজা অসংখ্য সাবস্টেন্সের এই ধারণা বাতিল করে বলেছিলেন, সাবস্টেন্স একটাই, তার নাম গড।

স্পিনোজার সাবস্টেন্স অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না, অস্তিত্বের জন্যও না, ভাবনার জন্যও না। ব্যাপ্তি ও চিন্তা সাবস্টেন্সের এট্রিবিউট বা প্রধান বৈশিষ্ট্য। অস্তিত্বের দিক দিয়ে সাবস্টেন্স ও এট্রিবিউটের কোনো পার্থক্য নাই, দুইটা একই জিনিস, একসাথে থাকে। এট্রিবিউটহীন সাবস্টেন্স নাই, সাবস্টেন্সহীন এট্রিবিউট নাই। কিন্তু ভাবনার দিক দিয়ে এদের পার্থক্য আছে। আমরা সাবস্টেন্সকে তার এট্রিবিউট থেকে আলাদাভাবে ভাবতে পারি, যদিও তারা বাস্তবে এক। মোড হলো জেনারেল এট্রিবিউটের স্পেশাল এক্সপ্রেশন। মনের সব চিন্তা হলো আমার চিন্তা-এট্রিবিউটের মোড, সব কিছুর দেহ হলো ব্যাপ্তি-এট্রিবিউটের মোড। একটা এট্রিবিউটের অসংখ্য মোড থাকতে পারে। মোড হচ্ছে সাবস্টেন্স-এট্রিবিউটের বিরাজ করার নির্দিষ্ট ধরণ। আমরা সাবস্টেন্সকে দ্রব্য, এট্রিবিউটকে গুণ আর মোডকে রূপ বলতে পারি; এখন থেকে তাই বলব। অস্তিত্ব ও ভাবনা দুই দিক থেকেই রূপের আগে দ্রব্য-গুণ। কারণ ছাড়া কোনো কার্য হয় না, আর যেকোনো কার্যের জ্ঞান মানেই তার কারণের জ্ঞান। নিখিলের সবকিছু খোদার কার্য, নিখিল জানা যাবে কেবল যদি তার কারণ খোদাকে জানা যায়। ‘এথিক্সের’ প্রথম খণ্ডের সব প্রপোজিশন আগে দেখা যাক।

  1. দ্রব্য তার সব রূপের আগে।
  2. দুই দ্রব্যের গুণ আলাদা হলে তাদের মধ্যে কমন কিছু নাই।
  3. দুয়ের মধ্যে কিছু কমন না থাকলে একে অপরের কারণ হতে পারে না।
  4. দুইটা জিনিসকে আলাদা করা যায় হয় তাদের গুণের পার্থক্য দিয়ে নয় তাদের রূপের পার্থক্য দিয়ে।
  5. মহাবিশ্বে একই স্বভাব বা গুণের দুই বা ততোধিক দ্রব্য থাকতে পারে না।
  6. এক দ্রব্য থেকে আরেক দ্রব্য তৈরি করা যায় না।
  7. অস্তিত্ব দ্রব্যের গুণ।
  8. প্রত্যেক দ্রব্য অবশ্যই অসীম।
  9. যার বাস্তবতা যত বেশি তার গুণ তত বেশি।
  10. একটা দ্রব্যের প্রতিটা গুণ শুধু সেই গুণের মাধ্যমেই ভাবা যায়।
  11. খোদা, অর্থাৎ অসীম গুণবিশিষ্ট দ্রব্য যার প্রতিটা গুণ চিরন্তন ও অসীম এসেন্স প্রকাশ করে, অবশ্যই আছেন।
  12. দ্রব্যের এমন কোনো গুণ ভাবা সম্ভব না যা থেকে মনে হয় দ্রব্য বিভাজ্য।
  13. পরম অসীম দ্রব্য অবিভাজ্য।
  14. খোদা ছাড়া আর কোনো দ্রব্য নাই বা ভাবা যায় না।
  15. যাই আছে খোদার মধ্যে আছে এবং খোদা ছাড়া কিছু ভাবা যায় না।
  16. খোদার স্বভাব থেকে অসংখ্য রূপে অসংখ্য জিনিস অবশ্যই আসে।
  17. খোদা শুধু তার স্বভাবের সূত্র অনুযায়ী কাজ করেন, অন্য কিছু মেনে নয়।
  18. খোদা সবকিছুর অন্তর্নিহিত কারণ, বহির্ভূত কারণ না।
  19. খোদা চিরন্তন, মানে তার সব গুণ চিরন্তন।
  20. খোদার অস্তিত্ব ও তার এসেন্স একই জিনিস।
  21. খোদার যেকোনো গুণের পরম স্বভাব থেকে যা কিছু আসে সব অবশ্যই চিরন্তন ও অসীম।
  22. খোদার কোনো গুণ থেকে যা আসে সব আবশ্যিক ও অসীম, যদি সেই গুণ আবশ্যিক ও অসীম রূপায়ণের মাধ্যমে রূপায়িত হয়।
  23. আবশ্যিক ও অসীম যত রূপ আছে সব হয় খোদার কোনো গুণের পরম স্বভাব থেকে এসেছে, নয় কোনো গুণের আবশ্যিক ও অসীম রূপায়ণ থেকে এসেছে।
  24. খোদার বানানো কোনো জিনিসের এসেন্সের মধ্যে অস্তিত্ব নাই।
  25. খোদা সবকিছুর শুধু অস্তিত্বের কার্যকরী কারণ না, এসেন্সেরও কার্যকরী কারণ।
  26. কোনো জিনিস নির্দিষ্ট কিছু করার জন্য নির্ধারিত মানেই সেই নির্ধারণটা করেছেন খোদা, খোদা যাকে নির্ধারিত করেন নাই সে নিজে নিজেকে কিছু করার জন্য নির্ধারিত করতে পারে না।
  27. খোদা যাকে নির্দিষ্ট কিছু করার জন্য নির্ধারিত করেছেন সে নিজেকে অনির্ধারিত করতে পারে না।
  28. যেকোনো সসীম ও নির্ধারিত জিনিস থাকে ও কিছু করে কারণ তার থাকা ও করা অন্য একটি সসীম ও নির্ধারিত জিনিস দিয়ে নির্ধারিত, এবং এই সসীম ও নির্ধারিত কারণ থাকে ও কিছু করে কারণ তার থাকা ও কিছু করা আরেকটি সসীম ও নির্ধারিত জিনিস দিয়ে নির্ধারিত, এবং এই দ্বিতীয় কারণও আরেকটা কিছু দিয়ে নির্ধারিত, এবং এভাবে কার্যকারণের চক্র অসীম পর্যন্ত চলতেই থাকে।
  29. প্রকৃতিতে আকস্মিক কিছু নাই, সবকিছু খোদায়ী স্বভাবের আবশ্যিকতা দিয়ে থাকা ও কিছু করার জন্য নির্ধারিত।
  30. সক্রিয় সসীম বুদ্ধি বা সক্রিয় অসীম বুদ্ধি ভাবতে পারে শুধু খোদার গুণ ও রূপ, আর কিছু না।
  31. কামনা করা, ভালোবাসা, বা অন্য যেকোনো কিছু করা সসীম বা অসীম সক্রিয় বুদ্ধি কেবল ‘সৃষ্ট’ প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত, ‘স্রষ্টা’ প্রকৃতির সাথে না।
  32. ইচ্ছা কোনো স্বাধীন কারণ নয়, কেবল এক আবশ্যিক কারণ।
  33. সবকিছু যেমন আছে তার চেয়ে ভিন্ন কোনোভাবে খোদার মাধ্যমে তারা তৈরি হতে পারত না।
  34. খোদার শক্তিই তার এসেন্স।
  35. খোদার শক্তির মধ্যে আমরা যাকিছু ভাবতে পারি সব অবশ্যই আছে।
  36. এমন কিছু নাই যার স্বভাব থেকে একটা প্রভাবের জন্ম হয় না।
om/spinoza.1712476496.txt.gz · Last modified: 2024/04/07 01:54 by asad

Donate Powered by PHP Valid HTML5 Valid CSS Driven by DokuWiki