Abekta

Nothing human is alien to me

User Tools

Site Tools


This is an old revision of the document!


ভূমিকা

মানুষের ইতিহাসে এস্ট্রোনমিকেল বিজ্ঞান অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক আগে জন্ম নিয়েছে। প্রাচীন যুগে যখন প্রতিদিনের জীবন ও কাজ নিয়ে আমাদের প্র্যাক্টিকেল জ্ঞান থেকে বাঁধাধরা বিজ্ঞান হিসেবে ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রির জন্ম হয়নি তখনি এস্ট্রোনমি ছিল অনেক উন্নত বিজ্ঞান। এই প্রাচীনতাই মানুষের কালচারের ইতিহাসে এস্ট্রোনমির এক বিশেষ জায়গা ঠিক করে দেয়। জ্ঞানের অন্যান্য জগৎ বিজ্ঞানে পরিণত হয়েছে অনেক পরে এবং তাদের প্রগতি হয়েছে প্রধানত ইউনিভার্সিটি ও ল্যাবরেটরির দেয়ালের মধ্যে, যেখানে রাজনৈতিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব খুব একটা প্রবেশ করতে পারেনি। এর বিপরীতে এস্ট্রোনমি অনেক প্রাচীন যুগেই তাত্ত্বিক জ্ঞানের এমন এক সিস্টেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল যার মাধ্যমে মানুষ ভয়ানক এক্লিপ্সের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত, মানুষের আধ্যাত্মিক দ্বন্দ্বেও যার ভূমিকা ছিল।

এই ইতিহাসের সাথে সভ্যতার শুরু থেকে মানুষের ক্রমবিকাশের সম্পর্ক আছে, এটা এমন এক সময়ে ঘটেছিল যখন পার্থক্য ছিল না সমাজের সাথে ব্যক্তির, শ্রমের সাথে আচারানুষ্ঠানের, বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের। প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে পরের সব শতকে সামাজিক জীবনের প্রতিফলন হিসেবে তৈরি হওয়া ধর্মীয় ও দার্শনিক সব বিশ্বদর্শনের আবশ্যক উপাদান ছিল এস্ট্রোনমির মতবাদ। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানী পিছন ফিরে তার প্রথম পূর্বসূরিদের দিকে তাকালে নিজের মতো মানুষই দেখতে পান, পরীক্ষা ও সিদ্ধান্ত বা কারণ ও কার্য নিয়ে যাদের ধারণা তার চেয়ে আদিম হলেও খুব বেশি আলাদা না। এস্ট্রোনমার যখন পিছন ফিরে তার পূর্বসূরিদের দিকে তাকান, প্রথমে দেখতে পান ব্যাবিলনের পুরোহিত ও জাদুকর, গ্রিসের দার্শনিক, মুসলমান রাজকুমার, মধ্যযুগের মংক, রেনেসাঁর নোবিলিটি ও পাদ্রি, এবং সবশেষে কেবল সতের শতকের স্কলারদের মধ্যে খুঁজে পান নিজের মতো আধুনিক নাগরিক। এই সব মানুষের কাছে এস্ট্রোনমি শুধু এক স্পেশালিস্ট বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধ শাখা ছিল না, ছিল জীবন সম্পর্কে তাদের মূল ধারণার সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো এক বিশ্বব্যবস্থা। কোনো পেশাদার সংগঠনের ট্রেডিশনাল কার্যক্রম না, বরং মানবতার সবচেয়ে গভীর সমস্যাগুলো ছিল তাদের কাজের অনুপ্রেরণা।

এস্ট্রোনমির ইতিহাস হচ্ছে মানুষের তার নিজের বিশ্ব বিষয়ক ধারণার বিকাশের ইতিহাস। মানুষ সব সময় ভেবে এসেছে নিচের পৃথিবীর তুলনায় উপরের আকাশ এক গভীর অর্থে তার জীবনের উৎস ও এসেন্স। আকাশ থেকেই আসত আলো আর উষ্ণতা। সেখানেই যার যার পথ রচনা করত সূর্য ও অন্যান্য জ্যোতিষ্ক; সেখানেই থাকত দেবতারা যারা নিয়ন্ত্রণ করত তার ভাগ্য আর তারায় তারায় লিখে রাখত তাদের বার্তা। আকাশ ছিল খুব কাছে, মানুষের জীবনে তারার ভূমিকা ছিল। তারা নিয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে খোলা হতো উপরের জগৎ, মানুষের চিন্তা ও আধ্যাত্মিক চেষ্টা এর চেয়ে মহান কোনো বস্তু তখন খুঁজে পায়নি।

অনেক শতক ধরে চলা এই স্টাডি প্রাচীন কালেই আমাদের শিখিয়েছিল দুইটা জিনিস: আকাশের বিভিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর মহাবিশ্বের বিশালতা। তারাখচিত আকাশগোলক দিয়ে ঘেরা পৃথিবী মানুষের জন্য কেন্দ্র ও প্রধান বস্তু হলেও আসলে এক ছোট্ট অন্ধকার গ্লোব। অন্য সব বস্তু তার চারদিকে ঘুরে, ঘুরে সূর্য চাঁদ গ্রহ, কোনো কোনোটা তার চেয়েও বড়। এই বিশ্বদর্শন ঐতিহ্য হিসেবে থেকে গিয়েছিল যখন প্রাচীন বিশ্বের পতন হয় এবং বিজ্ঞান প্রায় এক হাজার বছরের এক মন্দায় ডুব দেয়। মধ্যযুগের শেষে এই ঐতিহ্য প্রচারিত হয় পশ্চিম ইউরোপের উদীয়মান কালচারে।

সেখানে ষোল শতকে কঠিন সামাজিক প্রগতির প্রভাবে এস্ট্রোনমি বিশ্বের এক নতুন ধারণার জন্ম দেয়। আমাদের জীবনের ভিত্তি বিষয়ক যে-জ্ঞান সবচেয়ে নিশ্চিত মনে করা হতো, অর্থাৎ পৃথিবীর নিশ্চলতা, তাই তখন হয়ে যায় আপাত ব্যাপার। বলা হয়, আমাদের পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরা একই রকম আরো অনেক গ্রহের একটি। তার বাইরে আছে সূর্যের মতো অসংখ্য তারার অনন্ত জায়গা। এটা ছিল বিপ্লব, যা খুলে দিয়েছিল চিন্তার নতুন ধারা। অনেক চেষ্টায় অনেক সংগ্রামে মানুষকে এই নতুন বিশ্বের সাথে মানিয়ে নিতে হয়। সেই বিপ্লবের শতাব্দীগুলিতে বিশাল সব সামাজিক অভ্যুত্থানের সাথে মানুষের যে আধ্যাত্মিক সংগ্রাম জড়িয়ে ছিল তার অন্যতম উপাদান ছিল এস্ট্রোনমির সত্য নিয়ে প্রতিযোগিতা।

এস্ট্রোনমি প্রকৃতিবিদ্যার অন্য সব শাখার মতোই এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। পরের শতকে মহাবিশ্বের সব গতি নিয়ন্ত্রণ করা মৌলিক তত্ত্ব আবিষ্কার হয়। দার্শনিক চিন্তার বিপরীতে প্রথম বারের মতো দাঁড়ায় প্রকৃতির অনিবার্য অবিকল্প সব সূত্র। আকাশ ও মানুষের মধ্যে প্রাচীন মিস্টিকেল ও এস্ট্রোলজিকেল সংযোগের জায়গা দখল করে গ্র্যাভিটির সবখানে বিরাজমান যান্ত্রিক একশন।

তারপর অবশেষে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে ইউনিভার্সের আকার এত বেড়ে যায় যে তা প্রকাশ করা সম্ভব শুধু সংখ্যা দিয়ে, এর বিপরীতে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতা এতই ক্ষুদ্র যে তা বলারও কোনো অর্থ থাকে না। আবার, বা এখনো, এস্ট্রোনমি সারা মহাবিশ্ব নিয়ে কাজ করার বিজ্ঞান, যদিও বর্তমানে এটা কেবল স্থানের দিক দিয়ে সত্য। প্রাচীন পৃথিবীতে প্রকৃতির স্টুডেন্টদের হৃদয়ে আন্দোলন তৈরি হতো আকাশের সাথে মানুষের একতার কথা ভেবে, আর বর্তমান কালে আমাদের আন্দোলনের কারণ মানুষের মনের শক্তি নিয়ে অহংকার, যে-শক্তি আমাদেরকে এই ছোট্ট বাড়ি থেকেও নিয়ে যেতে পারে সবচেয়ে দূরের কোনো তারার জগতে।

অনেক আগে যখন ফিজিকেল তত্ত্ব মানে ছিল বিমূর্ত অনুমান, এস্ট্রোনমি তখনি ছিল জ্ঞানের এমন সাজানো সিস্টেম যা দিয়ে কেউ স্থানকালে তার অবস্থান ও দিক হিসাব করতে পারত। পরের শতকগুলোতে এস্ট্রোনমি গবেষণা সবচেয়ে বেশি হতে থাকে তাত্ত্বিক দিকে, ইউনিভার্সের স্ট্রাকচার বিষয়ে, যার তেমন কোনো ব্যবহারিক সুবিধা ছিল না, যার চালিকাশক্তি ছিল সত্যের সাধনা, বুদ্ধির বিউটি। তখন বিভিন্ন বিজ্ঞানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক হয়ে যায় উল্টা। খুব দ্রুত উপরে উঠতে শুরু করে ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বায়োলজি। টেকনিকেল এপ্লিকেশনের মাধ্যমে তারা সমাজে একের পর এক বিপ্লব আনে, পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দেয়। এই বিপ্লবের প্রগতি সরণিতে এস্ট্রোনমি ছিল না, সে ছিল এক পাশে। তারারা আমাদের প্রযুক্তি, আমাদের বস্তুবাদী জীবন বা আমাদের ইকোনমিক সংগঠনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই তাদের বিদ্যা মহাবিশ্বের ভৌত জ্ঞান নিয়ে চিন্তা করার ভাববাদী আদর্শে পরিণত হয়। অন্যান্য বিজ্ঞান যেখানে মানুষের জীবন পাল্টে দেয়ার যুদ্ধে বিশাল বিশাল বিজয় অর্জন করে, সেখানে এস্ট্রোনমি হয়ে যায় কালচারের কাজ, মনের এডভেঞ্চার। তাই বরাবরের মতো এস্ট্রোনমি এখনো রয়ে গেছে মানুষের কালচারের ইতিহাসে এক অনিবার্য অংশ।

যে অতীত ভেদ করতে যায় সে মানুষের বিকাশের প্রসেসে সরাসরি অংশ নিতে পারে, মানুষের ইতিহাস হয় তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আমার এই কাজের উদ্দেশ্য এই অতীতের মধ্যে আমাদের এস্ট্রোনমিকেল বিশ্বদর্শনের প্রগতিকে মানুষের বিকাশের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ফুটিয়ে তোলা।

mu/groei/intro.1727417437.txt.gz · Last modified: 2024/09/27 00:10 by asad

Donate Powered by PHP Valid HTML5 Valid CSS Driven by DokuWiki