Abekta

Nothing human is alien to me

User Tools

Site Tools


Differences

This shows you the differences between two versions of the page.

Link to this comparison view

Both sides previous revisionPrevious revision
Next revision
Previous revision
bn:un:almagest-revolutions [2025/03/01 01:03] asadbn:un:almagest-revolutions [2025/03/02 02:27] (current) asad
Line 14: Line 14:
  
 ===== - এরিথমেটিক থেকে জিওমেট্রি ===== ===== - এরিথমেটিক থেকে জিওমেট্রি =====
-ব্যাবিলনিয়া'র জ্যোতির্বিদরা এরিথমেটিকের উপর যত গুরুত্ব দিয়েছিল গ্রিকরা তত গুরুত্ব দিয়েছিল জিওমেট্রির উপর। চাঁদ সূর্য ও গ্রহগুলো যেহেতু আসলেই জ্যামিতিক পথ অনুসরণ করে সেহেতু গ্রিকদের প্রেডিকশন ছিল আরো সহজ, আরো নিখুঁত। এবং সব ডেটা বিশ্লেষণ করে গ্রিকরা মহাবিশ্বের একটা পৃথিবীকেন্দ্রিক (জিওসেন্ট্রিক) মডেল তৈরি করেছিল। এই মডেলে প্রথম বড় অবদান রেখেছে তুরস্কের মাইলিটাস শহরের গ্রিক দার্শনিক এনাক্সিমেন্ডার। তার মতে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে স্থিরভাবে বসানো একটা সিলিন্ডার যার একটা সমান তলে মানুষ থাকে; একে ঘিরে আকাশের সবকিছু ঘুরছে; সবচেয়ে দূরে, সবার বাইরে সূর্য, তারপর চাঁদ, তারপর সব তারা, এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে পাঁচটি গ্রহ।+ব্যাবিলনিয়া'র জ্যোতির্বিদরা এরিথমেটিকের উপর যত গুরুত্ব দিয়েছিল গ্রিকরা তত গুরুত্ব দিয়েছিল জিওমেট্রির উপর। চাঁদ সূর্য ও গ্রহগুলো যেহেতু আসলেই জ্যামিতিক পথ অনুসরণ করে সেহেতু গ্রিকদের প্রেডিকশন ছিল আরো সহজ। এবং সব ডেটা বিশ্লেষণ করে গ্রিকরা মহাবিশ্বের একটা পৃথিবীকেন্দ্রিক (জিওসেন্ট্রিক) মডেল তৈরি করেছিল। এই মডেলে প্রথম বড় অবদান রেখেছে তুরস্কের মাইলিটাস শহরের গ্রিক দার্শনিক এনাক্সিমেন্ডার। তার মতে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে স্থিরভাবে বসানো একটা সিলিন্ডার যার একটা সমান তলে মানুষ থাকে; একে ঘিরে আকাশের সবকিছু ঘুরছে; সবচেয়ে দূরে, সবার বাইরে সূর্য, তারপর চাঁদ, তারপর সব তারা, এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে পাঁচটি গ্রহ।
  
 পিথাগোরাসের অনুসারীরা প্রথম ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল যে পৃথিবী একটা গোলক (স্ফিয়ার), সিলিন্ডার বা অন্য কোনো আকৃতির না। এরিস্টটল চন্দ্রগ্রহণের মাধ্যমে এর প্রমাণ সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছে। এই এক্লিপ্সের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর দিয়ে যায়, এবং ছায়ার চলমান প্রান্তটা থাকে গোল, পৃথিবী গোল হলেই কেবল এটা সম্ভব। পিথাগোরাসের অনুসারীরা প্রথম ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল যে পৃথিবী একটা গোলক (স্ফিয়ার), সিলিন্ডার বা অন্য কোনো আকৃতির না। এরিস্টটল চন্দ্রগ্রহণের মাধ্যমে এর প্রমাণ সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছে। এই এক্লিপ্সের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর দিয়ে যায়, এবং ছায়ার চলমান প্রান্তটা থাকে গোল, পৃথিবী গোল হলেই কেবল এটা সম্ভব।
Line 66: Line 66:
 ===== - জিওমেট্রি থেকে ফিজিক্স ===== ===== - জিওমেট্রি থেকে ফিজিক্স =====
 নিশ্চিত প্রমাণের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আঠার শতক পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যে নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়াই বেশির ভাগ এস্ট্রোনমার সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, কারণ এই মডেল বেশি সুন্দর। সেই সময়ের সবচেয়ে বড় অব্জার্ভেশনাল এস্ট্রোনমার টাইকো ব্রাহি অবশ্য বিশ্বাস করতে পারেনি। রাজার অনুগ্রহে ব্রাহি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অব্জার্ভেটরি বানিয়েছিল ডেনমার্কের (এখন সুইডেনে) ভেন দ্বীপে, প্রথমে উরানিবর্গ ১৫৭৬ সালে, পরে স্টের্নেবর্গ ১৫৮৪ সালে। বিশাল বিশাল সেক্সটেন্ট ও মুরাল কোয়াড্রেন্ট ব্যবহার করে ব্রাহি সাতশ'র বেশি তারার পজিশন মেপেছিল প্রায় ০.৫ আর্কমিনিট প্রিসিশনে। এতে 'আলমাজেস্টের' ডেটা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হয়ে পড়েছিল অকেজো। নিশ্চিত প্রমাণের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আঠার শতক পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যে নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়াই বেশির ভাগ এস্ট্রোনমার সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, কারণ এই মডেল বেশি সুন্দর। সেই সময়ের সবচেয়ে বড় অব্জার্ভেশনাল এস্ট্রোনমার টাইকো ব্রাহি অবশ্য বিশ্বাস করতে পারেনি। রাজার অনুগ্রহে ব্রাহি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অব্জার্ভেটরি বানিয়েছিল ডেনমার্কের (এখন সুইডেনে) ভেন দ্বীপে, প্রথমে উরানিবর্গ ১৫৭৬ সালে, পরে স্টের্নেবর্গ ১৫৮৪ সালে। বিশাল বিশাল সেক্সটেন্ট ও মুরাল কোয়াড্রেন্ট ব্যবহার করে ব্রাহি সাতশ'র বেশি তারার পজিশন মেপেছিল প্রায় ০.৫ আর্কমিনিট প্রিসিশনে। এতে 'আলমাজেস্টের' ডেটা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হয়ে পড়েছিল অকেজো।
 +
 +প্রত্যেক এস্ট্রোনমারের মধ্যে একজন কসমোলজিস্ট বাস করে। ব্রাহিও কসমোলজিকেল মডেল বানিয়েছিল একটা যার কেন্দ্রে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য তার চারদিকে ঘুরছে, আর পাঁচটা গ্রহ সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। ডেনমার্কের রাজার অনুগ্রহ হারানোর পর টাইকো প্রাগে এসে আরেক রাজার দরবারে চাকরি নিয়েছিল। তার এসিস্টেন্ট হিসাবে যোগ দিয়েছিল কেপলার। টাইকো মারা যাওয়ার পর তার ডেটা ইউজ করে মার্সের পুরো অর্বিট মডেল করার চেষ্টা করছিল কেপলার। করতে গিয়ে সে বুঝতে পারে, গ্রহের অর্বিট বৃত্তাকার হলে কোনভাবেই হিসাব মিলানো সম্ভব না, অর্বিট আসলে এলিপ্টিকেল, উপবৃত্তাকার। এটা এখন কেপলারের প্রথম সূত্র নামে পরিচিত। যুদ্ধের দেবতা মার্সের সাথে যুদ্ধ করে কেপলার আরো দুইটা সূত্র আবিষ্কার করেছিল।
 +
 +{{https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/6/69/Kepler-second-law.gif?nolink}}
 +
 +দ্বিতীয় সূত্র বলে, একটা গ্রহ তার এলিপ্টিকেল অর্বিটের কেন্দ্রে সমান সময়ে ($t$) সমান এরিয়া ($A$) সাবটেন্ড করবে। দূরে গেলে এরিয়া সরু হবে, কাছে আসলে এরিয়া চওড়া হবে, কিন্তু এরিয়ার মান পাল্টাবে না, যদি এরিয়ার আর্কটা পার হতে গ্রহের সমান সময় লাগে। উপরের এনিমেশনে বেগুনি এরিয়াটা সব সময় সমান। ক্যালকুলাসের ভাষায়
 +
 +$$ \frac{dA}{dt} = \frac{J}{2m}$$
 +
 +যেখানে $J$ গ্রহটার এঙ্গুলার মোমেন্টাম, আর $m$ ভর। মানে ডান পাশটা সব সময় কনস্টেন্ট। তৃতীয় সূত্র বলে, একটা গ্রহের পিরিয়ডের ($T$) স্কয়ার অর্বিটের কেন্দ্র থেকে তার গড় দূরত্বের ($r$) কিউবের সমানুপাতিক, যা নিউটন তার মহাকর্ষ তত্ত্বে কাজে লাগিয়েছিল এভাবে:
 +
 +$$ T^2 \propto r^3 \Rightarrow \left(\frac{r}{v}\right)^2 \propto r^3 \Rightarrow \frac{v^2}{r} \propto \frac{1}{r^2} \Rightarrow a_c \propto \frac{1}{r^2} $$
 +
 +যেখানে $v$ গ্রহের বেগ এবং $a_c$ তার সেন্ট্রিপেটাল এক্সিলারেশন, কেন্দ্রমুখী ত্বরণ। একটা দড়ির এক প্রান্তে পাথরের টুকরা বেঁধে দড়ির আরেক প্রান্ত ধরে মাথার উপর অনেক ক্ষণ ঘুরিয়ে দড়ি ছেড়ে দিলে পাথরটা যে স্লিংশটের মতো ছিটকে দূরে চলে যায় নেদারল্যান্ডের হাইগেন্স প্রথম তা গাণিতিকভাবে বুঝার চেষ্টা করেছিল। এই কেন্দ্রমুখী ত্বরণকে তাই হাইগেন্সের পুল বলা যায়। উপরের শেষ সমীকরণকে গ্রহের ভর ($m$) দিয়ে গুণ করার পর নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র ইউজ করলেই বাম পাশে মহাকর্ষ বল $(F_c)$ চলে আসবে:
 +
 +$$ F_c = m a_c = GMm \frac{1}{r^2} $$
 +
 +যেখানে $G$ নিউটনের গ্র্যাভিটেশনাল কনস্টেন্ট, আর $M$ সূর্যের ভরের প্রায় সমান। তবে নিউটনের ইন্টুইশন তৈরিতে আরো কয়েক জনের কাজের বড় ভূমিকা ছিল, বিশেষ করে ডিগস, দেকার্ত, গ্যালিলিও।
 +
 +{{https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/3/3e/ThomasDiggesmap.JPG?nolink}}
 +
 +কোপার্নিকাস বৈপ্লবিক হলেও এরিস্টটলের দুইটা জিনিস ত্যাগ করতে পারেনি, পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য ঘুচাতে পারেনি, এবং মহাবিশ্বের জিওমেট্রিকে সার্কুলার ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনি। এই দুই ধারণা ঘুচেছিল দেকার্তের 'প্রিন্সিপলস অফ ফিলোসফি' বইয়ের মাধ্যমে যা 'রেভলুশনসের' ঠিক একশ বছর পর প্রকাশিত হয়। তবে এরও অনেক আগে ১৫৭৬ সালে ইংল্যান্ডের টমাস ডিগস একটা বৈপ্লবিক কাজ করেছিল। কোপার্নিকাস প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে সব তারাকে তারাগোলকের সার্ফেসে চিন্তা করেছিল, তার মহাবিশ্ব ছিল বৃত্ত দিয়ে আবদ্ধ। ডিগস তারাদেরকে মুক্তি দেয়, চিন্তা করে যে শনির অর্বিটের পরে আর কোনো সার্কুলার অর্বিট নাই, বরং অসীম স্থান জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সূর্যের মতো আরো অসংখ্য তারা। ডিগসের মহাবিশ্বের মডেল উপরে দেখানো হয়েছে।
 +
 +{{https://www.gutenberg.org/files/46036/46036-h/images/p073.png?nolink}}
 +
 +এস্ট্রোনমিকে কসমোলজির মাধ্যমে গণিত থেকে ফিজিক্সে রূপান্তরিত করার কাজে এর পর অবশ্যই গ্যালিলিওর নাম বলতে হবে। ডাচদের দেখাদেখি টেলিস্কোপ বানিয়ে গ্যালিলিও ১৬১০ সালে প্রথম আকাশের দিকে তাক করে দেখেছিল অদেখা অনেক তারা, চাঁদের পাহাড় ও খাদ, শুক্র গ্রহের ফেইজ, এবং বৃহস্পতির চারটা উপগ্রহ। শুক্রের ফেইজ দেখে সে বুঝেছিল শুক্র আসলেই সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, আর জুপিটারের স্যাটেলাইট (১৬১০ সালের জানুয়ারি মাসের অব্জার্ভেশন উপরে দেখানো হয়েছে) তাকে বুঝিয়েছিল, মহাবিশ্বে পৃথিবী ছাড়াও অন্য কাউকে ঘিরে আবর্তন সম্ভব। নিশ্চিত প্রমাণ না হলেও এই দুই তথ্যের মাধ্যমে গ্যালিলিও কোপার্নিকাসের পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রপাগান্ডিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, যে কারণে তাকে আজীবন গৃহবন্দী থাকার শাস্তি পেতে হয়।
 +
 +নিউটন ১৬৮৭ সালে যখন [[wp>Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica|প্রিঙ্কিপিয়া]] প্রকাশ করে ততদিনে 'রেভলুশনসের' সূর্যকেন্দ্রিক মডেলে খুব বেশি বিজ্ঞানী ও দার্শনিকের সন্দেহ ছিল না, যদিও তখনো এই মডেল সব রিজনেবল ডাউটের ঊর্ধ্বে প্রমাণিত হয়নি। তবে এটা আয়রনিক যে আইনস্টাইন যখন তার মডিফাইড গ্র্যাভিটি প্রকাশ করে জেনারেল রেলেটিভিটি তত্ত্বের মাধ্যমে, তখন আমরা কিছুটা হলেও আবার টলেমি ও কোপার্নিকাসের কাছে, আলমাজেস্ট ও রেভলুশনসের কাছে ফিরে গিয়েছিলাম। কারণ আইনস্টাইনের রেলেটিভিটি শেষ পর্যন্ত দেখিয়েছে, পরম গতি বলে কিছু নাই, সব গতিই শেষ পর্যন্ত কোওর্ডিনেট সিস্টেমের উপর নির্ভর করে। সোলার সিস্টেমের গতি হিসাব করার জন্য আমরা পৃথিবী, সূর্য, বা পুরা সিস্টেমের ভরকেন্দ্র, যেকোনো বিন্দুকেই রেফারেন্স হিসেবে ধরে নিতে পারি।
 +
 +===== - রেভলুশনসের প্রমাণ =====
 +==== - এবারেশন: ১৭২৭ ====
 +বিশ শতকের আইনস্টাইন থেকে আমাদেরকে আবার আঠার ও উনিশ শতকে ফিরে যেতে হবে 'রেভলুশনসের' মডেলের প্রথম অব্জার্ভেশনাল প্রমাণ বুঝার জন্য। আঠার শতকে আলোর এবারেশন মাপার মাধ্যমে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর গতির সরাসরি প্রমাণ মিলেছিল। আর উনিশ শতকের বড় প্রমাণ এসেছিল তারার প্যারালাক্স থেকে। এবারেশনের পরিমাণ ২০ আর্কসেকেন্ডের মতো, আর প্যারালাক্স মাত্র ১ আর্কসেকেন্ড। টেলিস্কোপের প্রিসিশন ২০ থেকে ১ আর্কসেকেন্ড পর্যন্ত ভালো হতে প্রায় একশ বছর লেগেছিল বলেই এবারেশন (১৭২০ দশক) থেকে প্যারালাক্স (১৮৩০ দশক) আবিষ্কারের দূরত্ব প্রায় একশ বছর।
 +
 +{{https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/9/95/Aberrationseasons.svg?nolink}}
 +
 +[[aberration|আলোর এবারেশন]] হয় সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বেগের পরিবর্তনের কারণে। উপরের ছবির মতো যদি ধরা হয় অনেক দূরের তারা থেকে আলো লম্বালম্বিভাবে পৃথিবীতে আমাদের উপর পড়ছে, তাহলে বিভিন্ন সিজনে এই আলোকে আমরা বিভিন্নভাবে বাঁকতে দেখব। আলোর রশ্মি বেঁকে যায় পৃথিবীর বেগের দিকে। সেপ্টেম্বরে পৃথিবী ডান দিকে যাচ্ছে বলে আলো ডানে বাঁকে, ডিসেম্বরে ডান বাম কোনদিকেই বাঁকে না যেহেতু পৃথিবী তখন এই পেইজের ভিতরের দিকে যাচ্ছে, মার্চে আলো বাঁকে বাম দিকে। এই বাঁকার কারণে সব তারার পজিশন পাল্টায় পিরিয়ডিকভাবে। একটা তারার পজিশন জুন মাসে তার গড় মান থেকে বাড়তে বাড়তে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে দূরে যায়, তারপর কমতে কমতে ডিসেম্বরে আগের জায়গায় ফিরে আসে, এবং তারপর আবার বাড়তে বাড়তে মার্চে উল্টা দিকে সবচেয়ে দূরে যায়। এই সিম্পল হার্মনিক মোশন (এসএইচএম) একটা সাইন কার্ভ দিয়ে মডেল করা যায়। এবং এর এমপ্লিচুড মাপার সহজ সমীকরণটা হচ্ছে
 +
 +$$ \alpha = \theta-\phi = \frac{v}{c} $$
 +
 +যেখানে $\alpha$ এবারেশন, $\theta$ রেস্ট ফ্রেমে তারার ডেক্লিনেশন, $\phi$ মুভিং ফ্রেমে তারার ডেক্লিনেশন, $v$ পৃথিবীর বেগ, আর $c$ আলোর বেগ।
 +
 +{{https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/6/62/Bradley%27s_observations_of_%CE%B3_Draconis_and_35_Camelopardalis_as_reduced_by_Busch.jpg?nolink&500}}
 +
 +আঠার শতকের সবচেয়ে বড় এস্ট্রোনমারদের একজন ইংল্যান্ডের জেমস ব্র্যাডলি পৃথিবীর বেগের কারণে তারার পজিশনের এই পরিবর্তন পাব্লিশ করেছিল ১৭২৭ সালে। গামা ড্রাকোনিস (নীল কার্ভ) ও ৩৫ ক্যামেলোপার্ডালিস (লাল কার্ভ), এই দুই তারার এবারেশনের অব্জার্ভেশন উপরে দেখানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে গামা ড্রাকোনিসের এবারেশন সর্বোচ্চ ২০ আর্কসেকেন্ড হয় মার্চ ও সেপ্টেম্বরে। ব্র্যাডলির এই আবিষ্কারের পর থেকে এস্ট্রোনমাররা তারার পজিশন থেকে পৃথিবীর অর্বিটের কারণে তৈরি এবারেশনের ইফেক্ট বাদ দিয়ে তারপর তারার প্রপার মোশন হিসাব করত। এতে অব্জার্ভেশনের প্রিসিশন আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়।
 +
 +==== - প্যারালাক্স: ১৮৩৮ ====
 +{{:courses:ast201:parallactic-ellipse.png?nolink&700|}}
 +
 +তবে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে, ব্র্যাডলি অব্জার্ভেশন শুরু করেছিল আসলে [[parallax|তারার প্যারালাক্স]] মাপার জন্য। প্রাচীন গ্রিকরাই জানত, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ঘুরলে পৃথিবীতে থাকা একজন অব্জার্ভার আকাশে তারার অবস্থান উপরের ছবির মতো পাল্টাতে দেখবে। এই ইফেক্টের নাম প্যারালাক্স। এটাও সাইন কার্ভ দিয়ে মডেল করা যায়। তারা যদি মাথার ঠিক উপরে থাকে তাহলে প্যারালাক্সের কারণে তার পজিশনের পরিবর্তন হবে একটা সার্কুলার পথে, আর যে তারা যত দিগন্তের দিকে তার প্যারালাক্স তত বেশি এলিপ্টিকেল পথে পাল্টাবে। প্যারালাক্স সরাসরি দূরত্বের সাথে সম্পর্কিত। যে তারার দূরত্ব যত বেশি তার প্যারালাক্স তত কম।
 +
 +জ্যামিতিক হিসাব থেকে ব্র্যাডলি জানত যে প্যারালাক্সের কারণে গামা ড্রাকোনিস ডিসেম্বর মাসে তার বার্ষিক পথের সবচেয়ে দক্ষিণে থাকার কথা, এবং তারপর এক মাসের মধ্যে তার পজিশন খুব একটা পাল্টানোর কথা না। কিন্তু মাপতে গিয়ে সে দেখেছিল, ডিসেম্বরের পরেও তারাটা আরো দক্ষিণে যাচ্ছে এবং মার্চে সবচেয়ে দক্ষিণে পৌঁছাচ্ছে। মানে তিন মাস দেরিতে সবচেয়ে দক্ষিণে পৌঁছাচ্ছে। কারণটা তার মাথায় এসেছিল টেমস নদীতে নৌকায় ঘুরতে গিয়ে। সে দেখেছিল, নৌকার ওয়েদার-ভেইন কোনদিকে থাকবে তা শুধু বাতাসের দিক না, সাথে নৌকার বেগের দিকের উপরও নির্ভর করে। বাতাসের জায়গায় আলো, আর নৌকার জায়গায় পৃথিবী বসালেই বুঝা যায়, তারার আলোর দিক কি হবে তা শুধু তারার দিক না, পৃথিবীর বেগের দিকের উপরও নির্ভর করবে। তবে এজন্য বাতাসের মতোই আলোর বেগ সসীম হতে হবে, যা ওলে রয়মার ১৬৭০ দশকেই প্রমাণ করেছিল। সুতরাং ব্র্যাডলির মনে আর সন্দেহ থাকে না যে গামা ড্রাকোনিসের পজিশন পাল্টাচ্ছে এবারেশনের জন্য, প্যারালাক্সের জন্য না।
 +
 +{{ :courses:ast201:parallax-angle.png?nolink&150|}}
 +
 +এবং এবারেশনের ম্যাক্সিমাম কেন প্যারালাক্সের ম্যাক্সিমামের চেয়ে তিন মাস আগে-পরে হবে তাও সে বুঝতে পেরেছিল। প্যারালাক্স পৃথিবীর পজিশনের উপর নির্ভর করে, আর পজিশন হচ্ছে পৃথিবীর অর্বিটের রেডিয়াসের শেষ প্রান্ত, মানে এটা কাজ করে রেডিয়াস বরাবর। অন্যদিকে এবারেশন পৃথিবীর ভেলোসিটির উপর নির্ভর করে, যা অর্বিটের সাথে ট্যাঞ্জেন্ট। রেডিয়াস ও ট্যাঞ্জেন্টের মধ্যে যেহেতু ৯০ ডিগ্রি কোণ আছে সেহেতু দুয়ের মধ্যে একটা ৯০ ডিগ্রির ফেইজ ডিফারেন্স থাকবে। বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরা যদি বারো মাসে হয়, তাহলে ৯০ ডিগ্রি পার্থক্যের সাথে সম্পর্ক থাকবে ৩ মাসের।
 +
 +ব্র্যাডলির কোনো অব্জার্ভেশনে যেহেতু প্যারালাক্স ধরা পড়েনি সেহেতু প্যারালাক্স নিশ্চয়ই ১ আর্কসেকেন্ডের কম। এবং আসলেই তাই। পাশের ছবিতে যেমন দেখানো হয়েছে, প্যারালাক্টিক এঙ্গেল
 +
 +$$ \tan p \approx p = \frac{a}{r} $$
 +
 +যেখানে $a$ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব, মানে ১ এস্ট্রোনমিকেল ইউনিট, আর $r$ হলো $S$ বিন্দুতে থাকা একটা তারার দূরত্ব। সবচেয়ে কাছের তারা প্রক্সিমা সেন্টরির দূরত্ব ৪.২ লাইট ইয়ার এখানে বসালে প্যারালাক্স পাওয়া যাবে মাত্র ০.৭৬ আর্কসেকেন্ড। অন্য সব তারার প্যারালাক্স হবে আরো কম। এটা বুঝার কারণেই ব্র্যাডলির পর এস্ট্রোনমাররা অনেক দিন আর প্যারালাক্স মাপার চেষ্টা করেনি। প্রায় একশ বছর পর ১৮৩৫ সালে ফ্রিডরিখ স্ট্রুভে ভিগা'র প্যারালাক্স পেয়েছিল ১/৮ আর্কসেকেন্ড, কিন্তু তার দুই বছর পর আরো অব্জার্ভেশনের পর যখন একই প্যারালাক্সের মান পাওয়া যায় ১/৪ আর্কসেকেন্ড (আগের চেয়ে দ্বিগুণ) তখন অনেকেই স্ট্রুভের আবিষ্কার বিশ্বাস করতে রাজি হয়নি।
 +
 +জার্মানিতেই ফ্রিডরিখ বেসেল ১৮৩৪ সালে ৬১ সিগ্নি তারার প্যারালাক্স মাপার চেষ্টা শুরু করেছিল। স্ট্রুভের দাবিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেসেল আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণ শুরু করে এবং ১৮৩৮ সালে ৬১ সিগ্নি'র প্যারালাক্স ঘোষণা করে ১/৩ আর্কসেকেন্ড। এই প্রথম মানুষের হাতে আসে তারাদের দূরত্ব মাপার একটা কার্যকর মেথড।
bn/un/almagest-revolutions.1740816221.txt.gz · Last modified: 2025/03/01 01:03 by asad

Donate Powered by PHP Valid HTML5 Valid CSS Driven by DokuWiki