- English
- বাংলা
Table of Contents
This is an old revision of the document!
৩. স্টেলার যুগ
সক্রেটিস: গ্যালাক্টিক যুগে আমরা দুইটা ব্যাপার বুঝার সময় পাইনি। প্রথমত, গ্যালাক্সি কিভাবে এলিপ্টিকেল থেকে লেন্টিকুলার হয়, মানে একটা গোল জিনিস কিভাবে ফ্ল্যাট হয়। দ্বিতীয়ত, গ্যালাক্সির ডিস্কের মধ্যে কিভাবে স্পাইরাল আর্মের জন্ম হয়। স্টেলার যুগেই যেহেতু এসব ঘটনা ঘটেছে সেহেতু আশাকরি যুদ্ধের দেবতা মার্স এই দুই ব্যাপার পরিষ্কার করে আমাদেরকে শান্তি দিবে।
মার্স: যুদ্ধের পরে শান্তি আসবে। কিন্তু আপাতত যুদ্ধ ছাড়া গতি নাই। দেখো সামনে বিরাট ইয়ারলুং-সাংপো গর্জ, পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘ গিরিখাত। এই গর্জের কানফাটা গর্জনের কারণে তো আমরা কেউ কারো কথা শুনতেই পারব না।
হার্মিস: আমরা তোমার কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি। ‘ক্রাউচিং টাইগার, হিডেন ড্রাগন’ সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো এক লাফে নামছা বারওয়া’র চূড়া থেকে চলো সবাই গর্জের একদম নিচে। সেখানেই সব শব্দের মধ্যে ভাসাব আমাদের কথার শব্দ।
[সবাই পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দেয় নিচে, এক মুহূর্তে চলে আসে ৭ কিমি নিচে সিয়াং নদীর তীরে।]
1. জন্মহার ও মৃত্যুহার
সক্রেটিস: ইউনিভার্সের সাত যুগ যেভাবে ভাগ করা হয়েছে তা নিয়ে আমার কনফিউশন আছে। প্ল্যানেটারি থেকে কালচারাল পর্যন্ত চার যুগের সময়সীমা যে পৃথিবী ও মানুষের সাপেক্ষে করা হয়েছে তা বুঝেছি। কিন্তু স্টেলার যুগ আমরা ঠিক দশ বিলিয়ন বছর আগে থেকে শুরু করলাম কেন? প্রথম গ্যালাক্সির জন্ম যখন হয়েছে প্রথম তারাদের জন্মও তখন হয়েছে। তাহলে স্টেলার যুগকে গ্যালাক্টিক যুগের পরে নিয়ে আসার কারণ কি?
মার্স: এই প্রশ্ন উঠবে জেনেই এই ফিগার আগে থেকে রেডি করে রেখেছি। এখানে দেখা যাচ্ছে কালো ও লাল রঙের দুইটা কার্ভ গত বারো বিলিয়ন বছরের মধ্যে প্রায় সব সময় খুব কাছাকাছি ছিল। কালো কার্ভটি হচ্ছে স্টার ফর্মেশন রেট (এসএফআর), আর লালটি ব্ল্যাক হোল এক্রিশন রেট (বিএইচএআর)। এক্স অক্ষে আছে উপরে সময়, নিচে রেডশিফট; আমরা গ্যালাক্টিক যুগেই জেনেছি রেডশিফট সময়ের প্রক্সি। ওয়াই অক্ষে আছে দুইটা রেট। ফর্মেশন রেটটা এক ধরনের জন্মহার। এর মাধ্যমে জানা যায় মহাবিশ্বের ইতিহাসের যেকোনো সময়ে এক বিলিয়ন (গিগা) কিউবিক লাইট-ইয়ার ভলিউমের মধ্যে যত তারার জন্ম হচ্ছিল তাদের মোট ভর সূর্যের কত গুণ। এক্রিশন রেটটা এক ধরনের মৃত্যুহার। এর মাধ্যমে জানা যায় সেই একই সময়ে এক বিলিয়ন কিউবিক লাইট-ইয়ারের মধ্যে সূর্যের কত গুণ ভরের পদার্থ ব্ল্যাকহোলের ভিতর হারিয়ে যাচ্ছিল।
সক্রেটিস: তা বুঝলাম, ফিগারটা এখন পড়া যাচ্ছে। এও বুঝতে পারছি যে দুইটা কার্ভই ১০ বিলিয়ন বছর আগে সবচেয়ে উঁচু বিন্দুতে পৌঁছেছিল।
মার্স: মানে দশ বিলিয়ন বছর আগে গ্যাস থেকে সবচেয়ে বেশি তারা জন্মাচ্ছিল, এবং একইসাথে সবচেয়ে বেশি তারা ও গ্যাস ব্ল্যাকহোলের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছিল। যখন জন্মের হার সবচেয়ে বেশি তখন মৃত্যুর হারও সবচেয়ে বেশি, যদি ব্ল্যাকহোলের ভিতরে হারিয়ে যাওয়াকে আমরা অন্তত রূপকার্থে হলেও মৃত্যু হিসেবে গণ্য করি।
সক্রেটিস: এর সাথে মানুষের জনসংখ্যার তুলনাও করা যায়। নাইজার, চাদ ও কঙ্গোতে জন্মহার যেমন বেশি, মৃত্যুহারও তেমন বেশি। অবশ্য মানুষের সমাজ যেকোনো ফিজিকেল সিস্টেমের চেয়ে বেশি জটিল হওয়াতে তুলনাটা অত সোজা হবে না।
মার্স: সোজা না হলেও বেশ মজার। যেমন গ্যাপমাইন্ডার দিয়ে বানানো এই ভিডিওতে গত প্রায় দুইশ বছরে পৃথিবীর সব দেশের নারী-প্রতি-সন্তান ও জন-প্রতি-জিডিপি’র পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। প্রতিটা বাবল একটা দেশ, বাবলের সাইজ জনসংখ্যার সমানুপাতিক। বর্তমানে যে-দেশে সন্তান কম সে-দেশের জিডিপি বেশি। জন্মহার ও মৃত্যুহার তুলনা করে একটা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হিসাব করা যায়। তারাদের জন্মহার যেমন দশ বিলিয়ন বছর আগে সবচেয়ে বেশি ছিল, তেমনি দেখা যাচ্ছে ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে পরিবার-প্রতি সন্তানের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল, ছয়ের বেশি। এখন আনুমানিক দুই।
সক্রেটিস: মহাবিশ্বের সাথে মানুষের তুলনা সব সময়ই মজার। তবে এক তারার সাথে আরেক তারার তুলনা এখন বেশি করা দরকার। আমার তো সব তারা দেখতে একই রকম লাগে, সব তারাই গোল, গ্যাসের বিশাল গোলক। তাহলে তারাদের শ্রেণিবিন্যাস কিভাবে করা হয়?
2. তারার শ্রেণিবিন্যাস
মার্স: মনে হচ্ছে তোমার ডিমন তোমাকে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় আমাদের আলোচনার পরের টপিক। এখন ঠিক তারার ক্লাসিফিকেশন নিয়েই কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
সক্রেটিস: আমার ডিমনের এত আজাইরা সময় নাই। যাহোক, তোমার ক্লাসিফিকেশন শুনি আগে।
মার্স: গ্যালাক্সিদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয় তাদের আকৃতির মাধ্যমে, কারণ তাদের আকৃতিতে আসলেই অনেক বৈচিত্র্য আছে। তারা সব যেহেতু দেখতে একই রকম গোল, সেহেতু ‘আকৃতি’র বদলে এদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয় ‘আকার’ দিয়ে। যে তারার আকার যত বেশি, অর্থাৎ যে তারা যত বড়, তার ভর ও তাপমাত্রাও তত বেশি। সুতরাং আকার, ভর ও তাপমাত্রা তিনটাই শ্রেণিবিন্যাসে সমানভাবে ইউজ করা যায়। এই ছবিতে ও থেকে এম পর্যন্ত ৭ ধরনের তারা দেখানো হয়েছে। সূর্যের চেয়ে আনুমানিক ৫০ গুণ ভারী তারারা হলো ও-টাইপ তারা। এদের সার্ফেস টেম্পারেচার প্রায় ৪০ হাজার কেলভিন, আর গড় আয়ু (লাইফটাইম) মাত্র ১০ মিলিয়ন বছর। সূর্য একটা জি-টাইপ তারা, এর সার্ফেস টেম্পারেচার মাত্র ৫ হাজার কেলভিন, আর আয়ু প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর। এম-টাইপ তারাদের ভর সূর্যের মাত্র ২০%, আর আয়ু প্রায় ১০০ বিলিয়ন বছর।
সক্রেটিস: তার মানে এ পর্যন্ত যত এম-টাইপ বা কে-টাইপ তারার জন্ম হয়েছে তাদের কোনোটাই মারা যায়নি?
মার্স: না। মহাবিশ্বে এই সব ছোট তারাদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। একটা দেশে ধনীর চেয়ে গরিবের সংখ্যাও কিন্তু অনেক বেশি হয়।
সক্রেটিস: ভালো তুলনা। তাহলে আমাদের সূর্য ধনী না গরিব?
মার্স: মিডল-ক্লাস বলতে হবে। পার্থক্যটা রঙের মধ্যেও ধরা পড়ে।
ইশ্তার: হ্যাঁ, ছোট তারারা একটু লাল, আর বড়রা একটু নীল। কিন্তু হোয়ার্লপুল গ্যালাক্সিতে যাওয়ার পথে আকাশগঙ্গা পার হওয়ার সময় তো আমাদের কাছে সব তারাই দেখতে সাদা মনে হচ্ছিল।
মার্স: তারা দেখতে সাধারণত সাদাই। এখানে বুঝানোর জন্য রংটা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারা দেখতে সাদা কারণ সে সব রঙের আলোই দেয়, সব রং একসাথে মিশালে সাদা রং পাওয়া যায়। তার মানে এই না যে সব তারা থেকে সব রং একই হারে বের হয়। বড় তারারা লালের চেয়ে নীল রঙের আলো বেশি তৈরি করে, ছোট তারারা নীলের চেয়ে লাল রঙের আলো বেশি বানায়, আর সূর্যের মতো মাঝারি তারারা লাল ও নীলের মাঝখানের সবুজ আলো বেশি দেয়। সূর্য থেকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আসে সবুজ আলো।
সক্রেটিস: তারার সাইজ বেশি হলে ভর ও তাপমাত্রাও বেশি হয়, কিন্তু এসবের সাথে রঙের কি সম্পর্ক?
মার্স: পার্টিকেল যুগেই আমরা দেখেছি যে রং মানে কম্পাঙ্ক। নীল রঙের আলোর কম্পাঙ্ক বেশি, সবুজের একটু কম, লালের আরো কম। কম্পাঙ্ক আবার সরাসরি এনার্জির সাথে সম্পর্কিত। যে তারার তাপমাত্রা বেশি তার এনার্জিও বেশি, কারণ টেম্পারেচার আসলে তারার সব গ্যাস-কণার গড় এনার্জির পরিমাপক। আর যে তারার এনার্জি যত বেশি সে তত বেশি কম্পাঙ্কের আলো দিতে পারে। এজন্যই ও-টাইপ তারারা এত নীল, জি-টাইপ তারারা এত সবুজ, আর এম-টাইপ তারারা এত লাল।
সক্রেটিস: খালি চোখে দেখতে যদি সবাইকেই সাদা দেখায় তাহলে রঙের পার্থক্য কিভাবে বুঝা সম্ভব?
মার্স: খালি চোখে সম্ভব না। কিন্তু টেলিস্কোপের ফোকাল প্লেইনে বসানো প্রিজমের মতো বিভিন্ন ধরনের স্পেক্ট্রোগ্রাফ দিয়ে আলোকে বিভিন্ন কম্পাঙ্ক বা রঙে ভাগ কর যায়। তার পর দেখা যায় কোন তারা থেকে কোন রঙের আলো সবচেয়ে বেশি আসছে। আসলে এইভাবে আলোর বর্ণালি বিশ্লেষণের মাধ্যমেই একটা তারার টেম্পারেচার মাপা হয়।
জুনো: আচ্ছা, বুঝলাম যে এই কারণেই তুমি তারার ‘সার্ফেস’ টেম্পারেচারের কথা বলছ। যে-আলোর রং দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে সেই আলো তারার সার্ফেস থেকে আসে। অতএব সার্ফেসের তাপমাত্রাই সহজে বের করা সম্ভব। কিন্তু তারার ভিতরের তাপমাত্রা জানার কি কোনোই উপায় নেই?
মার্স: আছে। স্টেলার স্ট্রাকচারের কিছু ইকুয়েশন আছে। এগুলো দিয়ে কম্পিউটারে তারা সিমুলেট করা যায়। আর এই সিমুলেশনের রেজাল্ট থেকে তারার সার্ফেস থেকে একেবারে সেন্টার পর্যন্ত তাপমাত্রা, ঘনত্ব, প্রেসার, ইত্যাদি সব জানা যায়।
সক্রেটিস: এখন কিন্তু তোমার আয়ুর ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার করা উচিত। আকার, ভর ও তাপমাত্রা বেশি হলে আয়ু কম হচ্ছে কেন?
মার্স: আবারো পরের টপিকে যেতে বাধ্য করছ। সহজ উত্তর হচ্ছে, যে তারা যত বড় সে তত তাড়াতাড়ি তার জ্বালানি শেষ করে ফেলে, তাই তত তাড়াতাড়ি মারা যায়।
সক্রেটিস: জ্বালানি মানে?
3. তারার জন্ম
4. তারার জীবন
5. তারার মৃত্যু
5.1 হোয়াইট ডোয়ার্ফ
5.2 নিউট্রন স্টার
5.3 ব্ল্যাক হোল