Table of Contents

ম্যাগ্নিচুড

এস্ট্রোনমিকেল অব্জেক্টের উজ্জ্বলতা মাপা হয় ম্যাগ্নিচুড দিয়ে। ম্যাগ্নিচুড মাপার কাজ প্রথম শুরু করেছিলেন গ্রিক এস্ট্রোনমার হিপার্কাস (যিশুর প্রায় ১৫০ বছর আগে) ও মিশরের এস্ট্রোনমার টলেমি (যিশুর প্রায় ১৫০ বছর পরে)। তারা খালি চোখে দেখা তারাদের উজ্জ্বলতা ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ এই ছয় সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করেন। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার ম্যাগ্নিচুড হয় ‘১’ আর সবচেয়ে অনুজ্জ্বল তারার ম্যাগ্নিচুড হয় ‘৬’। কোনো তারার ম্যাগ্নিচুড ‘৬’-এর বেশি হলে তা আর খালি চোখে দেখা যায় না। ম্যাগ্নিচুড বেশি মানে উজ্জ্বলতা কম, ম্যাগ্নিচুড কম মানে উজ্জ্বলতা বেশি।

হিপার্কাসের সিস্টেম পরে আমরা অনেক পাল্টিয়েছি। এখন আমাদের কাছে এমন অনেক তারার তথ্য আছে যাদের ম্যাগ্নিচুড ১-এর চেয়ে কম বা ৬-এর চেয়ে বেশি। এবং এই ম্যাগ্নিচুড এখন বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির জন্য আলাদা আলাদাভাবে মাপা হয়। দৃশ্যমান আলোতে আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা সূর্যের ম্যাগ্নিচুড হল -২৬.৭ আর দ্বিতীয় সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা সিরিয়াসের (লুব্ধক) ম্যাগ্নিচুড আনুমানিক -১.৫। অন্য দিকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে ২৯ ম্যাগ্নিচুডের চেয়ে অনুজ্জ্বল অব্জেক্টও দেখা যায়।

এবং হিপার্কাস-টলেমি যা মেপেছিলেন তা আসলে ছিল দৃশ্যমান আলোতে কোনো তারার এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড (আপাত মান), যা দূরত্বের সাথে পাল্টায়। অনেক উজ্জ্বল তারা আমাদের থেকে দূরে থাকলে অনুজ্জ্বল দেখাবে, অনেক অনুজ্জ্বল তারা আমাদের খুব কাছে থাকলে উজ্জ্বল দেখাবে। ভিগা (অভিজিৎ) আসলে সিরিয়াসের (লুব্ধক) চেয়ে উজ্জ্বল, কিন্তু আমাদের আকাশে সিরিয়াসের এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড ভিগার চেয়ে কম, মানে সিরিয়াস বেশি উজ্জ্বল। এবসলুট ম্যাগ্নিচুড কোনো তারার আসল উজ্জ্বলতা জানায়, আর এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড জানায় পৃথিবীর সাপেক্ষে আপাত উজ্জ্বলতা। ভেগার এপারেন্ট ও এবসলুট দুই ম্যাগ্নিচুডই ০, তাই সিরিয়াসের এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড (-১.৫) ভিগার চেয়ে কম, কিন্তু এবসলুট ম্যাগ্নিচুড (+১.৪৩) ভিগার চেয়ে বেশি।

এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুডের সাথে ফ্লাক্সের যে সম্পর্ক এবসলুট ম্যাগ্নিচুডের সাথে লুমিনসিটি'র সেই সম্পর্ক। বিস্তারিত নিচে আলাদা আলাদা সেকশনে আলোচনা করা হয়েছে।

এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড

হিপার্কাসরা যে-ম্যাগ্নিচুড মেপেছিলেন তা দৃশ্যমান আলোতে আমাদের চোখের দেখার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। আমাদের ভিশন লগারিদমিক। মানে আমরা দুইটা বাল্বের মধ্যে উজ্জ্বলতার পার্থক্য লিনিয়ারভাবে অনুভব করি না। একটা তারা আরেকটা থেকে ১০০ গুণ উজ্জ্বল হলে তাদের এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুডের পার্থক্য হবে ৫, আর ১০ গুণ উজ্জ্বল হলে পার্থক্যটা হবে ২.৫। ফ্লাক্স দশ গুণ হলে ম্যাগ্নিচুড দ্বিগুণ হচ্ছে। দুইটা তারার এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড $m_1$ ও $m_2$ হলে এবং ফ্লাক্স যথাক্রমে $F_1$ ও $F_2$ লেখা যায়

$$ \Delta m = m_2-m_1 \equiv -2.5 \log \frac{F_2}{F_1} $$

যেখানে $F_2/F_1=100$ বসালে $\Delta m=5$ পাওয়া যাবে। ইকুয়েশনটাকে ঘুরিয়ে লেখা যায়

$$ \frac{F_2}{F_1} = 10^{-0.4 \Delta m} $$

যেখানে $\Delta m=1$ বসালে ফ্লাক্সের রেশিও হবে ২.৫। অর্থাৎ দুইটা তারার মধ্যে ম্যাগ্নিচুডের পার্থক্য ১ হলে একটার ফ্লাক্স আরেকটার আড়াই গুণ হবে। নিচে এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুডের স্কেল -৩০ থেকে +৩০ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।

চাঁদের ম্যাগ্নিচুড -১২.৬। সবচেয়ে উজ্জ্বল কোয়েজারগুলি মাত্র +১২.৮ ম্যাগ্নিচুডের যেখানে +৬-এর বেশি হলেই আমরা আর খালি চোখে দেখতে পারি না। রেডিও দুরবিনের চোখে এই সব কোয়েজার শয়ে শয়ে ধরা পড়ে। হাবল দিয়ে +৩০ পর্যন্ত দেখা যায়। অর্থাৎ হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ‘লিমিটিং ম্যাগ্নিচুড’ +৩০।

এমন একটা কাল্পনিক তারার ম্যাগ্নিচুড ০ ধরা হয় যার সার্ফেস টেম্পারেচার ১০,০০০ কেলভিন আর দূরত্ব আমাদের থেকে ২৬.৪ লাইটইয়ার। ভিগা’র সার্ফেস টেম্পারেচার ৯,০০০ কেলভিন আর দূরত্ব প্রায় ২৫,০০০ লাইটইয়ার, যে-কারণে ভিগার এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড শূন্যের কাছাকাছি, ০.০৩।

দৃশ্যমান আলোতে এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড সাধারণত তিনটা ফটোমেট্রিক ব্যান্ডে আলাদা আলাদাভাবে মাপা হয়। ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড তিনটার নাম আল্ট্রাভায়োলেট বা ইউ, ব্লু বা বি আর ভিজুয়াল বা ভি। হলুদ রঙের ব্যান্ডকে ভিজুয়াল ডাকা হয়। তারার লাইট কালেক্ট করার সময় স্টারলাইটের সামনে ঠিক এই তিনটা ফিল্টারই ইউজ করা হয়, একেকটা ফিল্টার একেকটা ব্যান্ডের আলো সংগ্রহ করে। আর সব ব্যান্ডের আলো একসাথে নিলে যে ম্যাগ্নিচুড পাওয়া যায় তার নাম বলোমেট্রিক ম্যাগ্নিচুড। সূর্যের ক্ষেত্রে এই ম্যাগ্নিচুডগুলো নিচে দেখানো হয়েছে।

$m_U$ or $U$ $-25.91$
$m_B$ or $B$ $-26.10$
$m_V$ or $V$ $-26.75$
$m_{\text{bol}}$ $-26.83$

অনেক সময় ম্যাগ্নিচুডের বদলে এসআই ইউনিটে ফ্লাক্সের পরিমাণ জানার দরকার পড়ে। তখন স্পেক্ট্রাল ফ্লাক্স $S$ ইউজ করা হয় যার ইউনিট W m$^{-2}$ Hz$^{-1}$, অর্থাৎ প্রতি ফ্রিকোয়েন্সিতে আসা ফ্লাক্সের পরিমাণ। এর সাথে ফ্লাক্সের সম্পর্ক আগের মতোই:

$$ S = S_0 10^{-0.4(m-0)} $$

যেখানে $S_0$ এমন একটা তারার স্পেক্ট্রাল ফ্লাক্স যার ম্যাগ্নিচুড ০; এই কারণেই $\Delta m = m_2-m_1=m-0$ লেখা হয়েছে। শূন্য ম্যাগ্নিচুডের একটা তারার স্পেক্ট্রাল ফ্লাক্স একেক ব্যান্ডে একেক রকম; বি ব্যান্ডের মধ্য ফ্রিকোয়েন্সি ৪৩৬ ন্যানোমিটার, আর এই ফ্রিকোয়েন্সিতে শূন্য ম্যাগ্নিচুডের স্পেক্ট্রাল ফ্লাক্স ৪০০০ জানস্কি

এবসলুট ম্যাগ্নিচুড

এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুডের সাথে ফ্লাক্সের যে সম্পর্ক এবসলুট ম্যাগ্নিচুডের সাথে লুমিনসিটির সেই সম্পর্ক। লুমিনসিটি যেহেতু একেক ফ্রিকোয়েন্সি আলাদা আলাদাভাবে হিসাব করা হয় না সেহেতু এর সাথে বলোমেট্রিক ম্যাগ্নিচুডকে মিলাতে হয়। রিলেশনটা এরকম।

$$ M_{\text{bol}} \equiv -2.5 \log\frac{L}{L_\odot} + 4.74 $$

যেখানে সূর্যের লুমিনসিটি $L_\odot = 3.845\times 10^{26}$ W আর সূর্যের বলোমেট্রিক ম্যাগ্নিচুড ৪.৭৪। এখান থেকে পাওয়া যায় যেকোনো তারার লুমিনসিটি

$$ L = 10^{-0.4 M_{\text{bol}}} \times 3.0 \times 10^{28} \text{ W.} $$

তবে যেকোনো ব্যান্ডে যেকোনো তারার এবসলুট ম্যাগ্নিচুড হিসাব করা হয় এইভাবে: যেকোনো তারাকে পৃথিবী থেকে ১০ পার্সেক দূরে বসালে পৃথিবী থেকে তার যে এপারেন্ট ম্যাগ্নিচুড পাওয়া যাবে সেটাই তার এবসলুট ম্যাগ্নিচুড। সুতরাং এপারেন্ট আর এবসলুট ম্যাগ্নিচুড জানা থাকলে দূরত্ব বের করা যায়। ধরা যাক একটা তারার ফ্লাক্স $F$ মাপা হচ্ছে ১০ পার্সেক দূরে থাকা একটা তারার ফ্লাক্স $F_{10}$-এর সাথে তুলনা করে এবং এই দুই তারার লুমিনসিটি যথাক্রমে $L$ আর $L_{10}$; তাহলে তাদের এপারেন্ট ও এবসলুট ম্যাগ্নিচুডের পার্থক্য হবে

$$ m-M = -2.5 \log\frac{F}{F_{10}} + 2.5 \log \frac{L}{L_{10}} = 5\log r - 5 $$

যেখানে $F=L/(4\pi r^2)$ এবং $r$ পার্সেক ইউনিটে তারাটার দূরত্ব। এই ইকুয়েশনের নাম ‘ডিস্টেন্স মডুলাস’ কারণ এপারেন্ট ও এবসলুট ম্যাগ্নিচুড জানা থাকলে এর মাধ্যমে দূরত্ব বের করা যায়। একে উল্টিয়ে লেখা যায়

$$ r=10^{0.2(m-M)} 10 \text{ pc} $$

অর্থাৎ একটা তারার এপারেন্ট ও এবসলুট ম্যাগ্নিচুডের পার্থক্য ৫ হলে দূরত্ব ১০০ পার্সেক, ১০ হলে ১০০০ পার্সেক, আর ১৫ হলে ১০,০০০ পার্সেক।