Abekta

Nothing human is alien to me

User Tools

Site Tools


Differences

This shows you the differences between two versions of the page.

Link to this comparison view

Both sides previous revisionPrevious revision
Next revision
Previous revision
bn:courses:ast100:4 [2024/11/23 22:20] – [3. পৃথিবী] asadbn:courses:ast100:4 [2024/12/14 09:41] (current) – [4. গ্রহ আবিষ্কারের উপায়] asad
Line 1: Line 1:
-====== ৪. ল্যানেটাি যুগ ======+====== ৪. ্রহ যুগ ======
 **সক্রেটিস:** হার্মিস, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদেরকে ৪৬০ কোটি (৪.৬ বিলিয়ন) বছর আগের মিল্কিওয়েতে নিয়ে আসার জন্য। ওরায়ন-স্পারের এই জায়গায় খুব বেশি তারা নেই। কিন্তু অনেক দূরে একটা ডার্ক ক্লাউড দেখা যাচ্ছে। তোমাকে দেখাতে হবে আগামী ১৫ কোটি বছরে এই মলিকুলার মেঘ থেকে কিভাবে আমাদের আমাদের সৌরজগতের জন্ম হবে। চিন্তা নাই, তুমি যেমন স্পেসে ট্রাভেল করতে পারো ইশ্তার তেমনি পারে টাইমে ট্রাভেল করতে। ইশ্তারের সাহায্যে সময়কে যেমন ইচ্ছা ফাস্ট বা স্লো করতে পারো। **সক্রেটিস:** হার্মিস, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদেরকে ৪৬০ কোটি (৪.৬ বিলিয়ন) বছর আগের মিল্কিওয়েতে নিয়ে আসার জন্য। ওরায়ন-স্পারের এই জায়গায় খুব বেশি তারা নেই। কিন্তু অনেক দূরে একটা ডার্ক ক্লাউড দেখা যাচ্ছে। তোমাকে দেখাতে হবে আগামী ১৫ কোটি বছরে এই মলিকুলার মেঘ থেকে কিভাবে আমাদের আমাদের সৌরজগতের জন্ম হবে। চিন্তা নাই, তুমি যেমন স্পেসে ট্রাভেল করতে পারো ইশ্তার তেমনি পারে টাইমে ট্রাভেল করতে। ইশ্তারের সাহায্যে সময়কে যেমন ইচ্ছা ফাস্ট বা স্লো করতে পারো।
  
Line 118: Line 118:
  
 **সক্রেটিস:** চমৎকার। এক যুগের সাথে আরেক যুগের, এক বস্তুর সাথে আরেক বস্তুর তুলনার মাধ্যমেই আমাদের আগাতে হবে। স্যাটার্নের উত্তর মেরুর চারদিকে পিংকিশ-পার্পল রঙের যে অরোরা দেখা যাচ্ছে এটা কিভাবে তৈরি হয়? **সক্রেটিস:** চমৎকার। এক যুগের সাথে আরেক যুগের, এক বস্তুর সাথে আরেক বস্তুর তুলনার মাধ্যমেই আমাদের আগাতে হবে। স্যাটার্নের উত্তর মেরুর চারদিকে পিংকিশ-পার্পল রঙের যে অরোরা দেখা যাচ্ছে এটা কিভাবে তৈরি হয়?
 +
 ===== - পৃথিবী ===== ===== - পৃথিবী =====
 **হার্মিস:** পৃথিবীতে কিভাবে অরোরা তৈরি হয় বুঝলেই স্যটার্নেরটা বুঝতে পারবে। সৌরজগতের বয়স এখন প্রায় ১০০ কোটি বছর। এখন যদি আমরা স্যাটার্ন থেকে পৃথিবীতে যাই, তাহলে মানুষের উদ্ভবের ৩৬০ কোটি বছর আগেও পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে কিভাবে অরোরা তৈরি হতো দেখতে পারব। **হার্মিস:** পৃথিবীতে কিভাবে অরোরা তৈরি হয় বুঝলেই স্যটার্নেরটা বুঝতে পারবে। সৌরজগতের বয়স এখন প্রায় ১০০ কোটি বছর। এখন যদি আমরা স্যাটার্ন থেকে পৃথিবীতে যাই, তাহলে মানুষের উদ্ভবের ৩৬০ কোটি বছর আগেও পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে কিভাবে অরোরা তৈরি হতো দেখতে পারব।
Line 131: Line 132:
 {{:bn:courses:ast100:earth.webp?nolink|}} {{:bn:courses:ast100:earth.webp?nolink|}}
  
-**হার্মিস:** হ্যাঁ দুই এক্সিসের মধ্যে দূরত্ব আসলে ১১ ডিগ্রি। এবং পৃথিবী আসলেই একটা বিশাল বার ম্যাগ্নেট যার উৎস খুঁজতে হলে আমাদেরকে পৃথিবীর ভিতরটা দেখতে হবে এই ছবিতে।+**হার্মিস:** হ্যাঁ দুই এক্সিসের মধ্যে দূরত্ব আসলে ১১ ডিগ্রি। এবং পৃথিবী আসলেই একটা বিশাল বার ম্যাগ্নেট যার উৎস খুঁজতে হলে আমাদেরকে পৃথিবীর ভিতরটা দেখতে হবে এই ছবিতে। পৃথিবীর শরীর তিন ভাগে ভাগ করা যায়: কোর, ম্যান্টল, ক্রাস্ট। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কিমি রেডিয়াসের মধ্যে ক্রাস্টের পুরুত্ব মাত্র ৫০ কিমি, সুতরাং এটা পৃথিবীর ত্বকের মতো। ক্রাস্টের নিচে প্রায় তিন হাজার কিমি পুরুত্বের ম্যান্টল। তার নিচে সাড়ে তিন হাজার কিমি পুরুত্বের কোর, যাকে আউটার ও ইনার এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আনুমানিক ১৩০০ কিমি সাইজের ইনার কোর কঠিন লোহা ও নিকেল দিয়ে তৈরি। দুই হাজার কিমি পুরুত্বের আউটার কোরেও এই দুই মৌলই আছে, কিন্তু তরল হিসেবে। ইনার কোরকে যদি একটা চুলার সাথে তুলনা করি, তাহলে আউটার কোরকে বলা যায় সেই চুলার উপরে পানির কড়াই। পানি ফুটানোর সময় নিচ থেকে গরম পানি বুদ্বুদ হিসেবে উপরে উঠে, উঠতে উঠতে ঠাণ্ডা ও ভারী হয়ে আবার নিচে পড়ে যায়। এভাবে পানির মধ্যে যে সার্কুলার প্রবাহ তৈরি হয় তার নাম কনভেকশন। ইনার কোরের তাপে আউটার কোরের তরলের মধ্যেও এই কনভেকশন পাওয়া যায়। প্রবাহ যেহেতু তড়িৎ পরিবাহী মেটালের হচ্ছে, সেহেতু এখান থেকে একটা কনভেকশন কারেন্টের জন্ম হয়। উনিশ শতকে ফ্রান্সের এম্পিয়ার দেখিয়েছিলেন, তার দিয়ে বানানো একটা লুপের মধ্যে যদি ইলেক্ট্রিক কারেন্ট প্রবাহিত হয়, তাহলে লুপের কেন্দ্র থেকে লুপের এরিয়ার লম্ব দিকে ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। পৃথিবীর আউটার কোরে কনভেকশন কারেন্ট এই লুপ কারেন্টের মতোই। এই ইলেক্ট্রিক কারেন্টই আমাদের ম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের উৎস
  
-{{youtube>q-ng6YpxHxU?large}}+**সক্রেটিস:** তার মানে আগে যে ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড লাইন দেখিয়েছ তারা পৃথিবীর পেটের ভিতর থেকে বের হচ্ছে। এবং পৃথিবীর আউটার কোরে এই প্রতিটা লাইনের চারদিকে পাওয়া যাবে তড়িৎ প্রবাহের লুপ, তরল আয়রন-নিকেলের কনভেকশন কারেন্ট। ঠিক কি না? 
 + 
 +**হার্মিস:** ঠিক। সাথে এটাও বলে রাখা ভালো যে, কোরের তাপের কারণে কনভেকশন কারেন্ট শুধু আউটার কোরেই তৈরি হয় না, আরেকটা জায়গায়ও তৈরি হয় দারুণভাবে। ম্যান্টলের একদম উপরের লেয়ারটার নাম এস্থেনোস্ফিয়ার, যা আধা-কঠিন মাটি-পাথর দিয়ে তৈরি, পুরা তরল না, সেমি-সলিড। এই লেয়ারের উপরে আছে ক্রাস্ট। কিন্তু আমাদের শরীরের চামড়ার মতো পৃথিবীর ক্রাস্ট একটা অবিচ্ছিন্ন লেয়ার না, জিগস পাজলের মতো অনেক ভাগে বিভক্ত। এই ভাগগুলির নাম টেক্টোনিক প্লেট, বলা যায় এরা এস্থেনোস্ফিয়ারের সেমি-সলিডের উপর ভাসছে। এস্থেনোস্ফিয়ারের সেমি-সলিড পদার্থে কনভেকশন কারেন্টের কারণে প্লেটগুলি নড়তে থাকে, বছরে প্রায় ২ সেমি করে। একে অপরের দিকে আসতে থাকা দুইটা প্লেট যখন মুখোমুখি ধাক্কা খায়, তখন দুই প্লেটের সীমান্তে জেগে উঠে পাহাড়। ইন্ডিয়ান প্লেট আজ থেকে প্রায় ৫ কোটি বছর আগে ইউরেশিয়ান প্লেটের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল বলেই তৈরি হয়েছে হিমালয় পর্বতমালা। এই সংঘর্ষ এত রিসেন্ট যে হিমালয় এখনো উপরের দিকে উঠছে, বছরে প্রায় ৫ মিলিমিটার করে। 
 + 
 +{{https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/f/f2/Tectonic_plate_model_1Ga.webm?nolink&800}} 
 + 
 +**সক্রেটিস:** এই ভিডিওর মতো কি আমরা আসলেই পৃথিবীর শেষ এক বিলিয়ন বছর দেখতে পারি না? ইশ্তার সময়ের গতি বাড়িয়ে আমাদেরকে দেখাও পৃথিবীর ক্রাস্টে প্লেটগুলো কিভাবে নড়েছে। 
 + 
 +**ইশ্তার:** আমার মনে হয় না গ্লোবের উপর প্লেটের মুভমেন্ট স্পেস থেকে ভালো দেখা যাবে। আমাদের এখন ব্রহ্মপুত্রের নৌকায় ফিরে যাওয়া উচিত। তারা যুগের ঝঞ্ঝা শেষে গ্রহ যুগে যেমন শান্তি ও বিশালতা আসে, সিয়াং নদী থেকে আসামের উপত্যকায় নামলে সেই শান্তির অনুভূতি পাওয়া যাবে। 
 + 
 +<color purple>[আট জন আসামের ডিব্রুগড় থেকে নৌকায় উঠে ব্রহ্মপুত্র ধরে ধুবড়ীর দিকে যেতে থাকে।]</color> 
 + 
 +**হার্মিস:** তাহলে ভিডিওতেই দেখো গত ১০০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর ক্রাস্টের মেজর সব প্লেট কিভাবে মুভ করেছে। আর্থ-সায়েন্স রিভিউস জার্নালে ২০২১ সালে এই সিমুলেশন প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে প্লেটগুলি কখনো আস্তে চলে, কখনো দ্রুত চলে, কখনো কাছে আসে, কখনো দূরে যায়। ৫০ কোটি বছর আগে সব প্লেট দক্ষিণে সরে গিয়েছিল, সেখান থেকে উত্তরে উঠতে উঠতে ৩০ কোটি বছর আগে প্রায় সব প্লেট একসাথে মিলে একটা একক সুপারকন্টিনেন্ট তৈরি করেছিল, যার নাম প্যানজিয়া; তখনকার সব মহাসাগরের সমন্বিত নাম প্যানথালাসা। তারপর গত ত্রিশ কোটি বছর ধরে প্লেটগুলি আবার ভাগ হয়ে বর্তমান সাত মহাদেশ তৈরি করেছে। এশিয়ার দিকে ভারতের দৌড় ভিডিওতে খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** সৌরজগতের অন্য যে তিন গ্রহের কঠিন ক্রাস্ট আছে তাদের প্লেটও কি এভাবে নড়ে? 
 + 
 +**হার্মিস:** না। বুধ, শুক্র, মঙ্গল, কারো সার্ফেসেই টেক্টোনিক এক্টিভিটি নাই। তবে শনির উপগ্রহ এন্সেলাডাসে থাকতে পারে। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** আচ্ছা, আমাদের সৌরজগতে না থাকলেও মিল্কিওয়েতে নিশ্চয়ই আরো অনেক তারার চারদিকে অনেক গ্রহেই টেক্টোনিক মুভমেন্ট আছে। ঠিক কি না? 
 +===== - গ্রহ আবিষ্কারের উপায় ===== 
 +**হার্মিস:** সূর্য ছাড়া অন্যান্য তারার সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ বা ইন্টারস্টেলার স্থানে মুক্তভাবে ভাসমান গ্রহদেরকে এক্সোপ্ল্যানেট বা বহির্গ্রহ বলে। এদের ক্রাস্টে টেক্টোনিক গতি আছে কি না তা মানুষ এখনো জানে না, যদিও সাত হাজারের বেশি বহির্গ্রহ ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** এক্সোপ্ল্যানেট বহির্গ্রহ এই সব শব্দের কোনো দরকার দেখছি না। গ্রহ তো গ্রহই, তা সে সূর্যের সাথেই থাকুক আর লুব্ধকের সাথেই থাকুক। তুমি বরং বলো অন্যান্য তারার পাশে এই সব "গ্রহ" আসলে কিভাবে "পাওয়া" গেছে? 
 + 
 +{{youtube>TbNGEkAuAjU?large}}
 \\ \\
 +**হার্মিস:** সবচেয়ে বেশি গ্রহ পাওয়া গেছে ট্রানজিট মেথডের মাধ্যমে। ট্রানজিট বলতে পারো এক্লিপ্সের ছোট ভাই। এই ভিডিওতে যেমন দেখতে পাচ্ছ। আমাদের দৃষ্টিকোণে একটা তারার সামনে দিয়ে তার কোনো গ্রহের যাওয়াকে ট্রানজিট বলে। গ্রহ তার তারার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তারাকে কিছুটা ব্লক করে দেয়, ফলে তারা থেকে আমাদের কাছে আলো কিছুটা কম আসে। এই কমার ব্যাপারটা আমরা লাইট কার্ভ দিয়ে বুঝতে পারি যা ভিডিওতে নিচে বাম কোণায় দেখানো হয়েছে। লাইট কার্ভ সময়ের সাথে তারার উজ্জ্বলতার পরিবর্তন দেখায়। গ্রহ যতক্ষণ তারার সামনে থাকে ততক্ষণ তারা থেকে আসা আলোর পরিমাণ কম থাকে, গ্রহ তারার সামনে থেকে চলে যাওয়ার পর আলোর পরিমাণ আবার আগের লেভেলে ফিরে আসে। ফলে লাইট কার্ভে কুয়ার মতো একটা ডিপ পাওয়া যায়।
 +
 +**সক্রেটিস:** এই ডিপের গভীরতা কি গ্রহের সাইজের সাথে সম্পর্কিত?
 +
 +**হার্মিস:** হ্যাঁ, গ্রহ যত বড় হবে লাইট কার্ভের ডিপ তত গভীর হবে। তারার চারদিকে যদি একাধিক গ্রহ থাকে তাহলে লাইট কার্ভ আরো ইন্টারেস্টিং হয়। ভিডিওতে তিনটা গ্রহের একটা সিস্টেমে ট্রানজিট দেখানো হয়েছে। প্রত্যেক গ্রহের ট্রানজিটের জন্য একটা করে ডিপ পাওয়া যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রহটা একই সময় ট্রানজিট করেছে বলে দ্বিতীয় ডিপের মধ্যেই পাওয়া যায় তৃতীয় ডিপ। একাধিক গ্রহের সিস্টেমে লাইট কার্ভে এমন জটিল প্যাটার্ন পাওয়া যায় যা বিশ্লেষণ করে শুধু যে গ্রহের সাইজ বের করা যায় তাই না, সেই সাথে জানা যায় তারার চারদিকে গ্রহের আবর্তনের পিরিয়ড। গ্রহ যতক্ষণে তারার চারদিকে একটা আবর্তন শেষ করে ততক্ষণ পরপরই একটা করে ডিপ পাওয়া যায়।
 +
 +**সক্রেটিস:** তুমি যে বললে গ্রহকে তারার সামনে দিয়ে যেতে দেখা যায়, এটা কি আক্ষরিক অর্থেই সত্য? মানে গ্রহটা কি আসলেই "দেখা" যায়?
 +
 +**হার্মিস:** না, গ্রহ আসলে দেখা যায় না। গ্রহ দৃশ্যমান আলো এমিট করে না, ইনফ্রারেড আলো যেটুকু এমিট করে তার পরিমাণও অনেক কম, তাই তারার তুলনায় গ্রহের উজ্জ্বলতা নগণ্য। যেই কারণে দিনের বেলায় পৃথিবীর আকাশে কোনো তারা দেখা যায় না সেই কারণেই অনেক উজ্জ্বল একটা তারার পাশে তার কোনো গ্রহ সরাসরি দেখা সম্ভব না। শুধু তারাটা দেখা যায়, এবং গ্রহের ট্রানজিটের কারণে তারার উজ্জ্বলতা যেটুকু কমে তা বুঝা যায়।
 +
 +**সক্রেটিস:** কিন্তু গ্রহ তো তারার আলো রিফ্লেক্ট করে, এই কারণেই তো পৃথিবীর আকাশে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোকে দেখতে কিছুটা তারার মতো লাগে। অন্য তারার গ্রহরাও কি এভাবে তাদের তারার আলো রিফ্লেক্ট করে না?
 +
 +**হার্মিস:** করে। কিন্তু অনেক দূরে হওয়ায় এই প্রতিফলিত আলো আমাদের পক্ষে তারা থেকে আলাদা করে দেখা সম্ভব হয় না। আমাদের থেকে দূরত্বের তুলনায় একটা তারা থেকে তার গ্রহের দূরত্ব এতই কম যে তা বুঝার মতো রেজলুশন বর্তমানে আমাদের টেলিস্কোপের নেই। কাছের কিছু প্ল্যানেটারি সিস্টেমের ছবি অবশ্য 'ডিরেক্ট ইমেজিঙের' মাধ্যমে তোলা হয়েছে, কিন্তু সেক্ষেত্রেও টেলিস্কোপের ফোকাল প্লেনে বিশেষ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করে তারাটাকে ব্লক করতে হয়েছে। এক্লিপ্সের সময় চাঁদ যেভাবে সূর্যকে ঢেকে দেয় সেরকম কৃত্রিম মাস্ক দিয়ে একটা তারাকে ব্লক করে দিতে পারলে তার চারদিকে গ্রহগুলো ভেসে উঠে। হাওয়াইয়ের কেক অব্জার্ভেটরিতে তোলা এমন একটা প্ল্যানেটারি সিস্টেমের সাত বছরের টাইমল্যাপ্স এই এনিমেশনে দেখতে পাচ্ছ।
 +
 +{{https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/4/48/Hr8799_orbit_hd.gif?nolink&500}}
 +
 +**সক্রেটিস:** আচ্ছা, তার মানে কেন্দ্রে যেখানে '★' চিহ্ন সেখানেই তারাটা থাকার কথা ছিল। ট্রানজিট মেথড নিয়ে তাহলে আরেকটা প্রশ্ন আছে। ট্রানজিটে যদি মোট আলোর পরিমাণ মাপা হয়, মানে তারার আলো এবং গ্রহ থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসা আলো, তাহলে গ্রহ যখন তারার পিছনে চলে যাবে তখনো মোট আলোর পরিমাণ কিছুটা কমে যাওয়ার কথা না?
 +
 +{{:bn:courses:ast100:transits.webp?nolink&650|}}
 +
 +**হার্মিস:** একদম ঠিক। এই ঘটনাকে বলে সেকেন্ডারি ট্রানজিট যা এই ডায়াগ্রাম দিয়ে বুঝতে পারবে। একটা গ্রহ আমাদের দৃষ্টিকোণে তার তারার সামনে দিয়ে গেলে হয় প্রাইমারি ট্রানজিট, আর পিছন দিয়ে যাওয়ার সময় হয় সেকেন্ডারি ট্রানজিট, আর গ্রহটা যদি তারার ডানে বা বামে থাকে তাহলে কোনো ট্রানজিট হয় না, কিন্তু আমাদের চাঁদের মতো তার ফেইজ পরিবর্তন হয়, মানে তার বিভিন্ন অংশ তারার আলোয় আলোকিত হয়। এই ডায়াগ্রামে নিচের প্যানেলে একটা সেকেন্ডারি থেকে আরেকটা সেকেন্ডারি ট্রানজিট পর্যন্ত একটা গ্রহ-তারার সম্পূর্ণ লাইটকার্ভ দেখানো হয়েছে, সাথে বিভিন্ন ফেইজের ছবিও আছে। সেকেন্ডারির তুলনায় প্রাইমারি ট্রানজিটের ডিপ অনেক বেশি গভীর, এতই গভীর যে এই ডায়াগ্রামে তার শুধু উপরের অংশটা দেখানো গেছে।
 +
 +**সক্রেটিস:** আচ্ছা বুঝলাম। গ্যালাক্টিক যুগে শশী আমাদেরকে ডপলার ইফেক্টের কথা বলেছিল: কোনকিছু আমাদের দিকে আসলে তার থেকে আসা আলোর ওয়েভলেন্থ কমে যায়, আর আমাদের থেকে দূরে গেলে বেড়ে যায়। এইখানে গ্রহটা যখন সেকেন্ডারি থেকে প্রাইমারি ট্রানজিটের দিকে আসে তখন সে আমাদের দিকে আসে, আর প্রাইমারি থেকে সেকেন্ডারির দিকে যাওয়ার সময় আমাদের থেকে দূরে যায়। তাহলে আমাদের দিকে আসার সময় গ্রহের প্রতিফলিত আলো ছোট (নীল) হওয়ার কথা, আর দূরে যাওয়ার সময় লম্বা (লাল) হওয়ার কথা। এটা মাপার কোনো উপায় আছে?
  
-===== - গ্রহ ডিটেকশনের উপায় ===== 
 {{youtube>IiCRZmrgB9g?large}} {{youtube>IiCRZmrgB9g?large}}
 \\ \\
 +**হার্মিস:** না, গ্রহেরটা মাপা সম্ভব না। কারণ, আগেই বলেছি, গ্রহের প্রতিফলিত আলো আলাদাভাবে মাপা অনেক কঠিন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো কোনো তারার চারদিকে যদি গ্রহ থাকে তাহলে শুধু গ্রহটা না, বরং তারাটাও একটা বিন্দুর চারদিকে আবর্তন করে। মানুষ মনে করে গ্রহ তারাকে কেন্দ্র করে ঘুরে, যা ঠিক না, আসলে গ্রহ-তারা সবাই তাদের প্ল্যানেটারি সিস্টেমের ভরকেন্দ্রকে আবর্তন করে। এই ভিডিওতে ছোট বৃত্তটা তারার অর্বিট, বড়টা গ্রহের অর্বিট, আর দুইটা বৃত্তের সাধারণ কেন্দ্রটা হচ্ছে পুরো সিস্টেমের ভরকেন্দ্র। দেখতেই পাচ্ছ তারাটাও ঘুরছে, এবং তারা যখন আমাদের দিকে আসছে তখন আলো নীল (ছোট) হচ্ছে, আর আমাদের থেকে দূরে যাওয়ার সময় তার আলো লাল (লম্বা) হচ্ছে।
  
-{{youtube>TbNGEkAuAjU?large}} +**সক্রেটিস:** আচ্ছা মনে পড়েছে, গ্যালাক্টিক যুগে সিস দিয়ে ভরকেন্দ্রের ব্যাপারটা বুঝিয়েছিল শশী। তারা যেহেতু গ্রহের চেয়ে অনেক ভারী সেহেতু সে ভরকেন্দ্রের অনেক কাছে থাকে, তাই তার অর্বিট সবচেয়ে ছোট।
-\\+
  
 +**হার্মিস:** হ্যাঁ। আর তারার এই গতিকে 'ওয়াবল' বলে। ভরের ব্যাপারটা যেহেতু বললেই, তাহলে বুঝতেই পারছ গ্রহের কারণে একটা তারা কতটুকু ওয়াবল করবে, মানে তার অর্বিট কত বড় হবে তা নির্ভর করবে গ্রহের ভরের উপর। সুতরাং 'রেডিয়াল ভেলোসিটি' নামে পরিচিত এই মেথড ব্যবহার করে শুধুমাত্র তারার রং পরিবর্তন মাপার মাধ্যমে গ্রহের ভর হিসাব করে ফেলা যায়।
 +
 +**সক্রেটিস:** আচ্ছা, ইন্টারেস্টিং। তাহলে ট্রানজিট মেথড থেকে গ্রহের সাইজ, আর রেডিয়াল ভেলোসিটির মাধ্যমে তার ভর যদি জানা যায়, তাহলে দুইটাকে একসাথে করে গ্রহটার ঘনত্ব বের করে ফেলা সম্ভব।
 ===== - গ্রহের শ্রেণিবিন্যাস ===== ===== - গ্রহের শ্রেণিবিন্যাস =====
-{{:bn:courses:ast100:exoplanets.webp?nolink|}}+**হার্মিস:** ঠিক ধরেছ। সাইজ থেকে ভলিউম বের করা যায়, আর ভরকে ভলিউম দিয়ে ভাগ করলেই ডেন্সিটি পাওয়া যায়। এই ফিগারে এখন পর্যন্ত পাওয়া সব গ্রহের ভরের সাপেক্ষে রেডিয়াস দেখানো হয়েছে। এক্স অক্ষে আছে পৃথিবীর ভরের সাপেক্ষে গ্রহের ভর, আর ওয়াই অক্ষে পৃথিবীর রেডিয়াসের সাপেক্ষে গ্রহের রেডিয়াস। প্রতিটা বাবল একটা গ্রহ, আর বাবলের রং দিয়ে গ্রহটা কোন মেথডে আবিষ্কার করা হয়েছে তা দেখানো হচ্ছে। 
 + 
 +{{:bn:courses:ast100:planets-r-m.webp?nolink|}} 
 + 
 +**সক্রেটিস:** আর ডায়াগোনাল দুইটা ড্যাশ-লাইন তাহলে কনস্টেন্ট ডেন্সিটির লাইন, ঠিক না? 
 + 
 +**হার্মিস:** হ্যাঁ, নিচের ডায়াগোনাল লাইনে যদি কোনো গ্রহ পাওয়া যায় তাহলে তার ঘনত্ব পৃথিবীর সমান, মানে তার এক কিউবিক সেমি পদার্থের ভর ৫ গ্রাম। আর উপরের লাইনে থাকা সব গ্রহের ঘনত্ব শনি গ্রহের সমান, মানে প্রতি কিউবিক সেমিতে মাত্র ০.৭ গ্রাম। দুই লাইনের মাঝখানে থাকা সব গ্রহের ঘনত্ব পৃথিবী ও শনির মাঝামাঝি। নিচের ডায়াগোনাল লাইনের নিচের সব গ্রহের ঘনত্ব পৃথিবীর চেয়ে বেশি, আর উপরের ডায়াগোনাল লাইনের উপরের সব গ্রহের ঘনত্ব শনির চেয়ে কম। এখানে আবিষ্কারের মেথডগুলোও দেয়া আছে। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** হ্যাঁ, বুঝাই যাচ্ছে ট্রানজিট সবচেয়ে সফল মেথড। সরাসরি ইমেজিং করা গেছে শুধু সবচেয়ে বড় ও ভারী গ্রহগুলির (উপরের ডান কোণায় নীল বাবল)। কিন্তু কিছু হলু ও লাল রঙের বাবল দিয়ে যেসব গ্রহ দেখানো হচ্ছে তাদের আবিষ্কারের মেথড নিয়ে তো কিছু বললে না। 
 + 
 +**হার্মিস:** সব মেথড আমাদের আপাতত না জানলেও চলবে। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** ফাঁকিবাজির কোনো সুযোগই দেখি তোমরা ছাড়তে চাও না। 
 + 
 +**হার্মিস:** জীবন অনেক ছোট, পড়াশোনার চেয়ে ব্রহ্মপুত্রের দুই পারে কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কের গণ্ডার দেখা অনেক বেশি আনন্দের। দেখো দুই গণ্ডার ঐ খানে গোসল করছে। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** তুমি আগে এই ফিগারটা বুঝাও তার পরে গণ্ডারদের ফিগার দেখব সবাই একসাথে। 
 + 
 +{{:bn:courses:ast100:planets-r-p.webp?nolink&800|}} 
 + 
 +**হার্মিস:** আচ্ছা, গ্যালাক্সি ও স্টারের ক্লাসিফিকেশন যেহেতু আমরা দেখেছি সেহেতু গ্রহের শ্রেণিবিন্যাস বাদ দেয়া ঠিক হবে না। এই স্ক্যাটার-প্লট নামে পরিচিত এই ফিগারে ওয়াই অক্ষে আগের মতোই গ্রহের রেডিয়াস আছে, কিন্তু এক্স অক্ষে ভরের বদলে দেখানো হয়েছে গ্রহের অর্বিটাল পিরিয়ড, মানে তারার চারদিকে একবার ঘুরে আসতে গ্রহের যত দিন লাগে সেটা। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** আর প্রতিটা বাবল একটা গ্রহ বুঝলাম, কিন্তু বাবলের কালার দিয়ে যে 'ইকুইলিব্রিয়াম' টেম্পারেচার দেখাচ্ছ সেটা কি জিনিস? 
 + 
 +**হার্মিস:** একটা গ্রহ তার তারা থেকে আলোর মাধ্যমে যে পরিমাণ এনার্জি পায় ঠিক সেই পরিমাণ এনার্জিই যদি প্রতিফলিত আলোর মাধ্যমে বের করে দেয়, তাহলে তার সার্ফেসের তাপমাত্রা যত হবে তার নাম ইকুইলিব্রিয়াম টেম্পারেচার। এটা বাস্তব তাপমাত্রা থেকে আলাদা হতে পারে। যেমন পৃথিবীর সার্ফেসে বাস্তবে গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু পৃথিবীর ইকুইলিব্রিয়াম টেম্পারেচার -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাস্তব তাপমাত্রা বেশি কারণ পৃথিবী যে পরিমাণ আলো পায় তার চেয়ে কম পরিমাণ আলো দেয়; প্রতিফলিত আলোর একটা অংশ গ্রিনহাউজ ইফেক্টের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়। যাহোক, দেখতেই পাচ্ছ যে গ্রহের পিরিয়ড যত কম সে তার তারার তত কাছে, সুতরাং তার তাপমাত্রাও তত বেশি (বাবলের রং তত বেশি লাল)। আর যার পিরিয়ড বেশি তার দূরত্ব বেশি, তাপমাত্রা কম (বাবল নীল)। পিরিয়ডের সাথে দূরত্বের এই সম্পর্ক কেপলার আজ থেকে চারশ বছর আগে বের করেছিলেন, যার সাথে তারা যুগে আমাদের দেখা হয়েছিল। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** আচ্ছা বুঝলাম। এবার শ্রেণিবিন্যাসটা বুঝাও। নিচের গ্রহগুলো পৃথিবীর মতো, উপরের গুলো (পৃথিবীর চেয়ে ১০ গুণ বড়) জুপিটার ও স্যাটার্নের মতো, আর মাঝের গুলো (৪ গুণ বড়) আইস জায়ান্ট ইউরেনাস ও নেপচুনের মতো। কিন্তু এক্স অক্ষ বরাবর বিভাজনটা কিভাবে করেছ, আর কালো রঙের ডায়মন্ড আইকনটা কি? 
 + 
 +**হার্মিস:** কালো ডায়মন্ড আইকন দিয়ে পৃথিবী বুঝানো যাচ্ছে, যার পিরিয়ড ৩৬৫ দিন। পিরিয়ড যত কম তাপমাত্রা তত বেশি, এই কারণে যেসব গ্রহের পিরিয়ড এক থেকে দশ দিনের কাছাকাছি তারা লাভা ওয়ার্ল্ড (পৃথিবীর মতো রকি হলে), ওশান ওয়ার্ল্ড (সমুদ্রে ঢাকা গ্রহ) অথবা হট জুপিটার (বৃহস্পতির মতো গ্যাসি হলে) হতে পারে। আর তাপমাত্রা যাদের অনেক কম তারা হয় কোল্ড গ্যাস জায়ান্ট নয় আইস জায়ান্ট। 
 + 
 +**সক্রেটিস:** সুপার-আর্থ কি জিনিস? 
 + 
 +**হার্মিস:** পৃথিবীর চেয়ে অন্তত দুই গুণ বড় কিন্তু নেপচুনের চেয়ে ছোট গ্রহদেরকে সাধারণত সুপার-আর্থ বা মহাপৃথিবী বলে। লোহা-গলানো গরম থেকে শুরু করে পানি-জমানো ঠান্ডা পর্যন্ত সব ধরনের সুপারার্থই পাওয়া গেছে। কেপলার-২২বি নামে পরিচিত একটা সুপার-আর্থ হতে পারে ওশান ওয়ার্ল্ড, মানে প্রায় পুরোপুরি সমুদ্রে আবৃত। সাত হাজার গ্রহের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজারই আবিষ্কার করেছে নাসা'র পাঠানো কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ; এসব গ্রহের নাম এজন্যই আমাদের বন্ধু বেচারা কেপলারের নামে।
  
 +**সক্রেটিস:** কেপলার-২২বি-তে পানির কথা শোনার পর আসলেই আর পড়াশোনা ভালো লাগছে না। [[https://youtu.be/YCXOtcharM0|কাজিরাঙা'র ব্রহ্মপুত্রে]] এখন চলো গণ্ডারের গোসল দেখি।
bn/courses/ast100/4.1732425614.txt.gz · Last modified: 2024/11/23 22:20 by asad

Donate Powered by PHP Valid HTML5 Valid CSS Driven by DokuWiki