Table of Contents

টিমেয়াস

সংলাপের চরিত্র: সক্রেটিস (সক), টিমেয়াস (টিম), হারমোক্রেটিস (হার্ম), ক্রিটিয়াস (ক্রিট)

১৭সক্রেটিস: এক, দুই, তিন … কিন্তু প্রিয় টিমেয়াস, আমাদের গতকালের যে খাদকরা আজ আমাকে খাওয়াবে বলেছিল তাদের মধ্যে চার নাম্বার জন কোথায়?

টিমেয়াস: তার কোনো অসুখ হয়েছে, সক্রেটিস, কারণ সে ইচ্ছা করে এই আসর মিস করত না।

সক: তাহলে যে-অনুপস্থিত তার অংশ তুমি ও তোমার বন্ধুদেরকেই পূরণ করতে হবে।

টিম: অবশ্যই, এবং আমাদের সাধ্যে যত দূর কুলায় তার মধ্যে চেষ্টার কোনো কমতি পাবে না, কারণ গতকাল আমরা তোমার কাছে এমন আতিথেয়তা পেয়েছি যে এখন আমাদের মধ্যে যারা উপস্থিত আছে তারা যদি তোমার ঋণ শোধ না করে তবে কাজটা ভালো হবে না।

সক: এখন তোমাদের কি মনে আছে আমি গতকাল তোমাদেরকে কি নিয়ে কথা বলতে বলেছিলাম এবং বিষয়গুলি কি ছিল?

টিম: কিছু মনে আছে, কিন্তু তুমি যেহেতু এখানে আছ তুমিই আমাদেরকে বাকিগুলি মনে করিয়ে দিতে পারবে। বা আরও ভালো হয়, তোমার সমস্যা না থাকলে, যদি শুরু থেকে সংক্ষিপ্তভাবে সবকিছু আবার বলো, যাতে আমরা বিষয়গুলি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে পারি।

সক: তবে তাই হোক; আমার মনে হয় গতকাল যে আলোচনায় আমরা জড়িয়েছিলাম তার বিষয় ছিল মূলত নাগরিক-সমাজ; কোন ধরনেরটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে এবং কেমন মানুষরা তা গঠন করে।

টিম: এবং তুমি যা বলেছিলে তা আমাদের সবার কাছে খুব যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছিল।

সক: আমরা কি প্রথমে নাগরিক-সমাজের মধ্যে কৃষিকাজ বা অন্য কোনও পেশায় নিযুক্ত লোকদের থেকে যোদ্ধা শ্রেণিকে আলাদা করিনি?

টিম: হ্যাঁ।

সক: এবং তাই যার যার স্বভাবের উপর ভিত্তি করে আমরা প্রত্যেকের জন্য তার উপযুক্ত একটি একক পেশা বরাদ্দ করেছিলাম, প্রত্যেকের জন্য শুধু একটি স্কিল। আমরা বলেছিলাম, যারা অন্য সবার হয়ে যুদ্ধ করবে তাদেরই নগরীর গার্ডিয়ান হওয়া উচিত। এবং যদি বাইরে থেকে বা এমনকি ভিতর থেকেও কেউ শহরটির বিরুদ্ধে খারাপ সংকল্প নিয়ে এগিয়ে আসে, তবে গার্ডিয়ানদের উচিত তাদেরকে নম্রভাবে বিচার করা ১৮যারা আমাদের নিজস্ব প্রজা বা স্বাভাবিক বন্ধু, আর তাদেরকে কঠোরভাবে যারা যুদ্ধের ময়দানে আমাদের শত্রু হিসেবে সম্মুখে আসে।

টিম: একদম।

সক: তাছাড়া আমার মনে হয় আমরা বলেছি যে অভিভাবকদের আত্মায় থাকা কিছু স্বভাব অবশ্যই একইসাথে তেজস্বী ও দার্শনিক হতে হবে, যাতে সে দুই পক্ষের জন্য যখন যেমন হওয়া দরকার তেমন হতে পারে: কখনো কোমল, কখনো কঠোর।

টিম: হ্যাঁ।

সক: আর তাদের প্রশিক্ষণ? তাদেরকে কি মিউজিক ও জিমন্যাস্টিক্স এবং গার্ডিয়ানদের জন্য উপযুক্ত সমস্ত বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া উচিত না?

টিম: পুরাপুরি উচিত।

সক: হ্যাঁ, এবং মনে হয় বলা হয়েছিল, যারা এইভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছে তারা কখনই স্বর্ণ বা রৌপ্য বা অন্য কিছুকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করবে না, বরং তারা হবে সৈনিকের মতো যারা জনগণকে রক্ষা করার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে গার্ডিয়ান হিসেবে বেতন পায় স্ব-নিয়ন্ত্রিত মানুষের জন্য উপযুক্ত পরিমাপে, যে-বেতন তারা একসাথে ব্যয় করে, সবাই একসাথে যৌথ জীবন যাপন করে, এবং তাদের সমস্ত বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকে অন্য ধরনের সব সাধনা থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখে।

টিম: এই সবও আমরা বলেছি।

সক: তার উপর, আমরা নারীদের কথাও উল্লেখ করেছি এবং বলেছি যে তাদের স্বভাব পুরুষদের মতোই গঠিত হবে, এবং সব ধরনের দায়িত্ব সকল নারীর মধ্যেও ভাগ করে দেয়া হবে, তা হোক যুদ্ধের ক্ষেত্রে বা দৈনন্দিন জীবনে।

টিম: এটাও বলা হয়েছিল।

সক: এখন, আমরা সন্তান প্রজনন সম্পর্কে কী বলেছিলাম, নাকি এটা মনে রাখা সহজ কারণ আমরা যা বলেছিলাম তা খুব অস্বাভাবিক ছিল? আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে সব স্ত্রী ও সন্তান সবার হওয়া উচিত, এবং আমাদের পরিকল্পনা ছিল এই যে, কেউ কখনও তার নিজের সন্তান চিনতে পারবে না বরং অন্য সবাইকে নিজের আত্মীয় হিসাবে বিবেচনা করবে, নিজের কাছাকাছি বয়সের হলে ভাই-বোন হিসাবে, বয়সে বড় হলে বাবা-মা ও দাদা-দাদি আর ছোট হলে ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনি হিসাবে।

টিম: হ্যাঁ, এবং যেমন বললে, এটা মনে রাখা সহজ।

সক: কিন্তু এটাও নিশ্চয়ই মনে আছে কীভাবে তারা সম্ভাব্য সবচেয়ে চমৎকার স্বভাব নিয়ে জন্মাতে পারে। আমরা বলেছিলাম, পুরুষ ও নারী শাসকদেকে অবশ্যই গোপনে মানুষের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে খারাপ পুরুষ ও ভালো পুরুষরা এক ধরনের লটারির মাধ্যমে শুধুমাত্র তাদের নিজেদের মতো নারী পায়। এতে কোনো বিতর্ক তৈরি হবে না কারণ তারা ধরে নেবে এই মিলনের জন্য কেবল চান্স দায়ী।

টিম: আমাদের মনে আছে।

সক: ১৯এছাড়াও আমরা বলেছিলাম যে ভালো লোকের সন্তানদের লালনপালন করা উচিত, আর খারাপ লোকের সন্তানদের গোপনে অন্য নগরে হস্তান্তর করা উচিত। কিন্তু তারা বড় হওয়ার সময় শাসকদের সর্বদা সজাগ থাকা উচিত যাতে যোগ্যদের আবার ফিরিয়ে আনা যায় এবং এই ফিরে আসাদের জায়গা নেয় তাদের নিজেদের মধ্যে অযোগ্যরা।

টিম: তাই আমরা বলেছি।

সক: তাহলে, প্রিয় টিমেয়াস, এখন আমরা মূল বিষয়গুলি যেহেতু আরও একবার শুনলাম, গতকাল যা কথা হয়েছিল তার সব কি আমরা বলতে পেরেছি, নাকি আরও কিছু বলা দরকার কারণ কিছু বাকি রয়ে গেছে?

টিম: মোটেই না, সক্রেটিস, এইগুলিই বলা হয়েছিল।

সক: গতকাল বর্ণনা করা নাগরিক-সমাজের কথা আবার শোনানোর পর এখন আমি চাই তুমি এ সম্পর্কে আমার অনুভূতি কেমন তা শোনো। আমার অনুভূতি অনেকটা এই রকম: ব্যাপারটা এমন যেন কেউ অনেক সুন্দর কিছু প্রাণী দেখেছে ছবিতে বা বাস্তবে জীবিত কিন্তু স্থির, এবং তারপর তার ইচ্ছা করছে দেখতে যে সেগুলি চলাফেরা করছে বা এমন একটি প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে যা তাদের জন্য উপযুক্ত বলে মনে হয়; আমরা যে নগর বর্ণনা করেছি তা সম্পর্কে আমার অনুভূতি ঠিক এমনই। আমি আনন্দের সাথে শুনতে চাই যে কেউ এমন প্রতিযোগিতার গল্প বলছে যাতে শহরগুলি সাধারণত অংশ নেয়, যখন এক নগরকে অন্য নগরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়; শুনতে চাই কিভাবে এক শহর সঠিক চেতনায় যুদ্ধে প্রবেশ করে এবং যুদ্ধের সময় অন্যান্য শহরকে দেখিয়ে দেয় তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উপযুক্ত সব গুণ, একইসাথে একশনে ও সমঝোতায়, সে যা করে ও যা বলে সবকিছুতে। এখন এই সব কিছুতে, ক্রিটিয়াস ও হারমোক্রেটিস, আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি নিজেও এই নাগরিকদের এবং এই নগরের পর্যাপ্ত প্রশংসা করতে অক্ষম। আমার নিজের ক্ষেত্রে এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়, তবে আমি প্রাচীন ও আধুনিক কবিদের ক্ষেত্রেও একই মতে উপনীত হয়েছি। এমন না যে আমি কবিদেরকে একটি শ্রেণি হিসাবে অসম্মান করি, তবে এটা সবার কাছে স্পষ্ট যে অনুকারী লোকেরা যে বিষয়ে ট্রেনিং পেয়েছে তা অনুকরণ করবেই, খুব সহজে ও চমৎকার ভাবে। কিন্তু তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের বাইরে থাকা কিছু তাদের পক্ষে ভালোভাবে অনুকরণ করা কঠিন, কাজে তো কঠিনই, কথায় আরো কঠিন।

এবং অন্যদিকে আমি বিশ্বাস করি সোফিস্টরা একটি শ্রেণী হিসাবে দীর্ঘ বক্তৃতায় ও অন্যান্য সূক্ষ্মতায় খুব অভিজ্ঞ, কিন্তু তারা শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়ায় এবং তাদের নিজস্ব কোনো নগর নেই বলে আমি আশঙ্কা করি তারা কোনো না কোনোভাবে তাদেরকে অবশ্যই ভুল বুঝবে যারা একইসাথে দার্শনিক ও দেশনায়ক, এবং এই লোকেরা সক্রিয়ভাবে সমরে অংশ নিয়ে যুদ্ধের সময় যা করবে ও বলবে, বা অন্যদের সাথে মৌখিক যত যোগাযোগ করবে তাও তারা বুঝতে পারবে না। তাহলে যারা অবশিষ্ট থাকে তারা হল তোমার মেজাজের লোকদের শ্রেণি, যা স্বভাবে ও শিক্ষায়, একইসাথে উভয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

২০যেমন, এখানে টিমেয়াস ইতালির সবচেয়ে ভালোভাবে শাসিত নগরী লোক্রি থেকে এসেছে এবং সে সম্পত্তি ও পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেখানকার যে কোনও ব্যক্তির চেয়ে বড়। সে এই শহরের সর্বোচ্চ পদ ও সম্মানের সাথে জড়িত ছিল এবং আমার মতে দর্শনের ক্ষেত্রেও চরম শিখরে পৌঁছেছে। এবং আমি অনুমান করি এই শহরের সবাই জানে আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করছি তাতে ক্রিটিয়াস কোনো এমেচার না। আর হারমোক্রেটিসের ক্ষেত্রে বলতে হয়, আমাদেরকে অবশ্যই সেই সব অসংখ্য সাক্ষীকে বিশ্বাস করতে হবে যারা বলে সে এই সমস্ত বিষয়ে দক্ষ, তার স্বভাব ও শিক্ষা দুই কারণেই।

এখন এটাই আমি ভাবছিলাম গতকাল যখন তুমি আমাকে নাগরিক-সমাজের বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলতে বলেছিলে, তাই সহজেই সম্মত হয়েছিলাম কারণ আমি জানতাম যে পরের বিষয়টিতে তোমাদের চেয়ে ভালো বিবরণ কেউ উপস্থাপন করতে পারবে না, যদি আসলেই চাও। আসলে তোমরা বর্তমানে একমাত্র মানুষ যারা কোনো শহরকে যথার্থ যুদ্ধে নিয়োজিত করতে পারো এবং তাতে তার উপযুক্ত সব গুণা প্রদর্শন করতে পারো। তাই যখন আমি আমাকে বরাদ্দ করা বিষয়ে কথা শেষ করেছিলাম, তখন উল্টা তোমাদেরকে সেই বিষয়গুলি বরাদ্দ করেছিলাম যার কথা এখন বলছি। সুতরাং তোমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে এখন কথার ভোজ দিয়ে আমার ধার শোধ করতে রাজি হয়েছ। তবে এই আমি, অনুষ্ঠানের জন্য সেজেগুজে উপহার নেয়ার জন্য যে কারো চেয়ে বেশি প্রস্তুত।

হারমোক্রেটিস: হ্যাঁ সত্যিই, সক্রেটিস, এখানে যেমন টিমেয়াস বলেছে, আমাদের উৎসাহের অভাব হবে না, এবং তুমি যা চাও তা না করার জন্য আমাদের কোনও অজুহাত থাকতেই পারে না। এজন্যই আমরা গতকাল এই বিষয়গুলি বিবেচনা করেছিলাম এখান থেকে রওয়ানা হয়ে ক্রিটিয়াসের যে-গেস্ট কোয়ার্টারে আমরা থাকছি সেখানে পৌঁছানোর সাথে-সাথে এবং তারও আগে রাস্তায়। সে আসলে আমাদেরকে তার অনেক আগে শোনা একটা গল্প বলেছিল। সক্রেটিসকে এখন গল্পটা বলো, ক্রিটিয়াস, যাতে সে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে যে এটা আমাদের এসাইনমেন্টের সাথে প্রাসঙ্গিক না অপ্রাসঙ্গিক।

ক্রিটিয়াস: আমাদের তৃতীয় সঙ্গী টিমেয়াসও রাজি থাকলে আমাকে তাই করতে হবে।

টিম: আমি অবশ্যই একমত।

ক্রিট: তাহলে শোনো, সক্রেটিস, একটা গল্প যা অদ্ভুত তবে সম্পূর্ণ সত্য, যেমন সাত ঋষির মধ্যে সবচেয়ে প্রাজ্ঞ সোলন একবার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি আমাদের দাদার বাবা ড্রোপিডিসের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, যেমন তিনি নিজেও তার কবিতায় অনেকবার বলেছেন। ড্রোপিডিস তারপর গল্পটা আমাদের দাদা ক্রিটিয়াসকে বলেছিলেন এবং এই বৃদ্ধ পালাক্রমে আমাদেরকে তা শুনিয়েছিলেন। গল্পটি বলে যে আমাদের এই শহরের প্রাচীন কাজগুলি বিস্ময়কর ও দুর্দান্ত ছিল কিন্তু সময় ও মানুষের ধ্বংসের কারণে সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের জন্য উপযুক্ত হবে ২১সেই কাজগুলির একটি এখন স্মরণ করা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এবং একই সাথে এই দেবীর উৎসবে তার প্রশংসা করার জন্য, যেন একটি হিম গাইছি।

সক: সবই ঠিক আছে, কিন্তু আমাদের শহরের এই প্রাচীন কাজটি কী; এমন কাজ যার কথা কেউ বলে না, অথচ ক্রিটিয়াস যা সোলনের অথরিটি দেখিয়ে বাস্তব সত্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন?

আটলান্টিস মিথ

ক্রিট: আমি তোমাকে একটা প্রাচীন গল্প বলব যা আমি এমন একজনের কাছ থেকে শুনেছি যে আর যুবক ছিল না। আসলেই ক্রিটিয়াস তখন, যেমন তিনি বললেন, প্রায় নব্বই বছর বয়সী ছিলেন আর আমার বয়স ছিল বেশি হলে দশ বছর। ঘটনাচক্রে সেটা ছিল শিশুদের আপাতুরিয়া উৎসবের দিন এবং উৎসবের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটিও যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাচ্চাদের জন্য, যেখানে আমাদের বাবারা আমাদের জন্য একটি আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। অনেক কবির অনেক কবিতা আবৃত্তি করা হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু সোলনের কবিতা তখন নতুন ছিল অনেক ছেলে সেগুলোই গাইছিল। গোত্রের একজন বলেছিল (হয় সে তা আসলেই বিশ্বাস করত বা হয়ত বলেছিল কেবল ক্রিটিয়াসের প্রশংসার জন্য) যে তার মতে সোলন সব দিক দিয়ে সবচেয়ে প্রাজ্ঞ মানুষ কিন্তু তার কবিতার বিবেচনায় সমস্ত কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এতে বৃদ্ধ (হ্যাঁ, সত্যিই, আমার এটা এত স্পষ্ট মনে পড়ে) খুব খুশি হয়েছিলেন এবং হেসে বলেছিলেন: “আমিনান্দার, যদি সোলন কবিতাকে বিভ্রান্তি হিসাবে বিবেচনা না করে অন্যদের মতোই এ নিয়ে অনেক কাজ করতেন এবং মিশর থেকে তার আনা গল্পটি সম্পূর্ণ করতেন, এবং এখানে ফিরে দ্বন্দ্ব ও অন্যান্য সমস্যার কারণে তা অবহেলা করতে বাধ্য না হতেন, তবে আমার মতে হেসিয়ড হোমার বা অন্য কোনো কবি তার চেয়ে বিখ্যাত হতে পারত না।” “গল্পটা কি ছিল, ক্রিটিয়াস,” সে জিজ্ঞাসা করেছিল। “হ্যাঁ, এর বিষয় এই শহরের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ,” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “এটা তার সবচেয়ে বিখ্যাত অর্জন হওয়ার যোগ্য, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এবং যারা জড়িত ছিল তাদের বিলুপ্তির কারণে গল্পটা এখানে টিকেনি।” “প্রথম থেকে বলুন,” লোকটা বলেছিল। “সোলন কী গল্প বলেছিলেন, তিনি তা কীভাবে শুনেছিলেন এবং কে তাকে বলেছিল যে এটা সত্য?”

“মিশরীয় বদ্বীপে,” তিনি বলেছিলেন, “নীল নদের স্রোত তার মোহনায় যেখানে বিভক্ত হয় সেখানে সাইতিক নামে এক অঞ্চল আছে যার সবচেয়ে বড় শহরের নাম সাইস। রাজা আমাসিস এখানেরই ছিলেন। যে-দেবতা শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাকে মিশরীয় ভাষায় নিথ বলা হয় এবং সেখানকার মানুষ বলে এটি গ্রিক ভাষায় এথিনা। তারা এথেন্স অনেক ভালোবাসে এবং কোনো না কোনোভাবে আমাদের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার দাবি করে। আসলে সোলন বলেছিলেন যে যখন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন তারা তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে গ্রহণ করেছিল, এবং তার উপর ২২এক সময় যখন তিনি প্রাচীনকাল সম্পর্কে একটি প্রশ্ন রাখেন এই ধরনের বিষয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ যাজকদের কাছে, আবিষ্কার করেন যে এক অর্থে তিনি বা অন্য কোন গ্রিকই এই সব সম্পর্কে সামান্যতম কিছু জানে না। একবার সোলন তাদেরকে প্রাচীনকাল নিয়ে আলোচনায় টানার জন্য এথেন্সের সবচেয়ে প্রাচীন গল্পগুলি বর্ণনা করতে শুরু করেছিলেন; বলেছিলেন ফোরোনিয়াস সম্পর্কে যাকে বলা হয় প্রথম মানুষ, নায়োবি সম্পর্কে, এবং বন্যার গল্পে বলেছিলেন কীভাবে ডিউকেলিয়ন ও পিরা বেঁচে গিয়েছিল, কারা ছিল এদের বংশধর, এবং একটা সময়কাল অনুমান করার চেষ্টা করেছিলেন এই সব ঘটনার পরে কত বছর পার হয়েছে তা গোনার মাধ্যমে। তখন এক যাজক, যিনি খুব বৃদ্ধ ছিলেন, বললেন: “ওহে সোলন, সোলন, তোমরা গ্রিকরা চিরকালই শিশু! এমন কোনো গ্রিক নেই যে বৃদ্ধ।” এই কথা শুনে সোলন জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনি কীভাবে এটি বলতে পারেন?” “তোমরা সবাই আত্মায় তরুণ,” তিনি বলেছিলেন। “তোমাদের আত্মায় এমন কোনো মতবাদ নেই যা পুরানো, এমন কোনো শিক্ষা নেই যা বয়সের ভারে ধূসর। কারণটা এই রকম: বিভিন্নভাবে মানবজাতি অনেক বার ধ্বংস হয়েছে এবং হবে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়গুলো হয়েছে আগুন ও পানির মাধ্যমে, ছোটগুলির কারণ আরো অনেক রকমের। আসলে তোমাদের এথেনিয়ানদেরও গল্প আছে কীভাবে সূর্যের সন্তান ফাইথন তার পিতার রথ ব্যবহার করেছিল, কিন্তু সে সূর্যের পথে চালাতে সক্ষম ছিল না বলে পৃথিবীতে আগুন বয়ে এনেছিল এবং নিজেও মরেছিল এক বজ্রপাতে। এখন এটা কেবল পৌরাণিক কাহিনী আকারে বলা হয়, কিন্তু সত্য হল পৃথিবীর চারপাশে ভ্রমণকারী জ্যোতিষ্কদের গতির একটি পালাবদল আছে, নিয়মিত দীর্ঘ বিরতিতে বিশাল আগুনের মাধ্যমে পৃথিবীর পৃষ্ঠে ধ্বংস নেমে আসে; যখন এটি ঘটে, যারা পাহাড়ে বা উঁচু স্থানে বা শুষ্ক জায়গায় বাস করে তারা সমুদ্র বা নদীর তীরে বাস করা মানুষদের চেয়ে বেশি ধ্বংসের শিকার হয়।

আমাদের সব সময়ের রক্ষক নীল নদ এমন সময়েও তার প্রবাহের মাধ্যমে আমাদেরকে এই দুর্দশা থেকে উদ্ধার করে। কিন্তু যখন দেবতারা পৃথিবীকে শুদ্ধ করতে পানি দিয়ে প্লাবিত করেন তখন পর্বতে থাকা রাখাল ও পশুপালকরা রক্ষা পায়, আর নগরে বসবাসকারী মানুষদের নদীগুলি ভাসিয়ে সাগরে নিয়ে যায়। তবে আমাদের এই দেশে জল কখনো উপর থেকে খেতের উপর ঝরে না—না তখন, না কখনো—বরং এটা সবসময় প্রাকৃতিকভাবে নিচ থেকে উঠে আসে। এই কারণেই এখানে সংরক্ষিত নথিগুলিকে সবচেয়ে প্রাচীন বলে মনে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, যেখানে অত্যধিক তাপ বা শীত বাধা দেয় না সেখানে সবসময় মানবজাতি কখনো বেশি সংখ্যায় কখনো কম সংখ্যায় বিদ্যমান থাকে। আর তোমাদের দেশে, আমাদের দেশে, অথবা অন্য যেকোনো স্থানে যেসব মহৎ, গুরুত্বপূর্ণ বা বিশেষ ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা শুনে থাকি তার সবই প্রাচীনকাল থেকে এখানকার মন্দিরগুলোতে লিখে রাখা হয়েছে এবং সংরক্ষিত আছে।

কিন্তু তোমাদের এবং অন্যান্য নগরগুলোর ক্ষেত্রে, যতবারই তোমরা লেখালেখি এবং শহরের প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসে দক্ষ হয়ে ওঠো, ততবারই নির্দিষ্ট বছর ঘুরে আকাশ থেকে প্রলয়ের জল আবার নেমে আসে তোমাদের উপর প্লেগের মতো। এর ফলে শুধু অশিক্ষিত আর অসংস্কৃত লোকেরাই টিকে থাকে, আর তোমরা আবার শিশুদের মতো হয়ে পড়ো— ২৩পুরোনো সময়ের ঘটনা সম্পর্কে কোনো জ্ঞান থাকে না, না তোমাদের নিজেদের মধ্যে, না অন্য কোথাও।

তুমি তোমাদের জাতির যে বংশপরম্পরার কথা বলেছ, সোলন, তা শিশুদের গল্পের চেয়ে খুব একটা ভালো নয়। প্রথমত, তুমি শুধু একটি বন্যার কথা মনে রেখেছ, যদিও এর আগে বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে, আর তুমি এখনো উপলব্ধি করো না যে মানবজাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মহৎ জাতি একসময় তোমাদের দেশেই বসবাস করত। তুমি এবং তোমাদের পুরো নগরী সেই জাতির বংশধর, তাদের বীজের একটি ছোট্ট অবশিষ্টাংশ থেকে তোমাদের জন্ম হয়েছে, কিন্তু এটা তোমরা জানো না, কারণ বহু প্রজন্ম ধরে যারা টিকে ছিল তারা মারা যাওয়ার সময় কোনো লিখিত নথি রেখে যায়নি। তবে এক সময় ছিল, সোলন, পানির সবচেয়ে বড় ধ্বংসযজ্ঞের আগে যখন বর্তমান যে নগরীকে আমরা এথেন্স বলি সেটি যুদ্ধে শ্রেষ্ঠ ছিল এবং সবদিক থেকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হতো। তার কীর্তি ছিল সবচেয়ে মহান এবং তার কাজের ধরন ছিল আকাশের নিচে আমাদের শোনা যেকোনো নগরের মধ্যে সবচেয়ে ন্যায়সংগত।”

এটা শুনে সোলন বিস্মিত হয়েছিলেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গে পুরোহিতদের অনুরোধ করেছিলেন যেন তারা এথেন্সের প্রাচীন নাগরিকদের সম্পর্কে সবকিছু সঠিকভাবে এবং যথাযথ ধারাবাহিকতায় বর্ণনা করেন। পুরোহিত বললেন, “সোলন, কেউ তোমার কাছে এই তথ্য দিতে কার্পণ্য করবে না, তাই আমি তোমার এবং তোমার নগরীর স্বার্থে এই গল্প বলব, বিশেষত সেই দেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যিনি তোমার এবং আমাদের নগরীকে গ্রহণ করেছেন, লালন করেছেন এবং শিক্ষিত করেছেন। প্রথমে তোমাদের নগরী হয়েছিল আমাদের এক হাজার বছর আগে, যখন তিনি পৃথিবী ও হেফেস্টাস থেকে তোমাদের বীজ নিয়েছিলেন; এই নগরী পরে এসেছে। আমাদের পবিত্র লেখায় উল্লেখ আছে যে এই সভ্যতা আট হাজার বছর বয়সী। তাই আমি সংক্ষেপে তোমাদের নাগরিকদের সম্পর্কে একটা ধারণা দেব—যারা আজ থেকে নয় হাজার বছর আগে ছিল—তাদের আইন ও তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলোর কথা বলব। তবে আমরা অন্য সময় বিশদভাবে এবং যথাযথ ধারাবাহিকতায় সবকিছু আলোচনা করব, ২৪যখন আসল নথিগুলো হাতে পাব।

এখন তোমাদের আইনগুলোর সাথে আমাদের আইনগুলোর তুলনা করো, কারণ তোমরা দেখবে যে তোমাদের প্রাচীন অনেক আইন আজও আমাদের এখানে প্রচলিত। প্রথমত, পুরোহিত শ্রেণিকে অন্যদের থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। এরপর কারিগরদের শ্রেণি তাদের নিজস্ব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং অন্য কোনো শ্রেণির সঙ্গে মেশে না; একই নিয়ম প্রযোজ্য পশুপালক, শিকারি ও কৃষকদের ক্ষেত্রেও। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের যোদ্ধা শ্রেণিকে, যেমনটা তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছ, অন্য সব শ্রেণি থেকে পৃথক রাখা হয়েছে, এবং তাদের আইনের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা শুধুমাত্র সামরিক বিষয়ে মনোনিবেশ করবে। আমাদের অস্ত্রশস্ত্রের নকশাও ঢাল ও বর্শার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা আমরা এশিয়ায় প্রথম গ্রহণ করেছিলাম, যেভাবে দেবী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিন, যেমন তিনি প্রথমে তোমাদের অঞ্চলেও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

তার উপর তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ যে মিশরে শুরু থেকেই ব্যবহারিক প্রজ্ঞা ও মহাবিশ্ব নিয়ে গভীর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে: মানবজীবনের ওপর এসব ঐশ্বরিক ব্যাপার প্রয়োগ করে ভবিষ্যদ্বাণী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য রক্ষার মেডিসিন পর্যন্ত সবকিছু আবিষ্কার করা হয়েছে এবং এদের থেকে পাওয়া সব বিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করা হয়েছে। এই হলো সেই সামগ্রিক গঠন ও নিয়মকানুন যা দেবী তোমাদের নগরী প্রতিষ্ঠার সময় তৈরি করেছিলেন, সেই স্থানটি বেছে নিয়ে যেখানে তোমরা জন্মেছ, কারণ তিনি বুঝেছিলেন সেখানকার নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু সবচেয়ে প্রাজ্ঞ মানুষের জন্ম দেবে। দেবী যেহেতু ভালোবাসতেন যুদ্ধ আর ভালোবাসতেন প্রজ্ঞা সেহেতু তিনি এমন একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন যা তার মতন মানুষ তৈরি করবে, আর সেখানেই তিনি প্রথম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নগরী। সেখানে তোমরা এই ধরনের আইন অনুসরণ করে বাস করছিলে; আসলে আইনের শাসনে তোমরা ছিলে সবার চেয়ে ভালো এবং সব ধরনের উৎকর্ষে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলে—যেমনটা আশা করা যায় দেবতাদের থেকে জন্ম নেওয়া ও তাদের হাতে শিক্ষিত একটি জাতির কাছ থেকে। এখন তোমাদের নগরীর বহু মহৎ কাজ, যা এখানে নথিভুক্ত আছে, সত্যিই বিস্ময়কর, কিন্তু একটি কীর্তি আছে যা গুরুত্ব আর উৎকর্ষে সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। আমাদের নথি অনুযায়ী একসময় আটলান্টিক মহাসাগর থেকে এক বিশাল শক্তি জেগে উঠেছিল এবং একইসঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়ার দিকে উদ্ধতভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল—তোমাদের নগরী এই শক্তিকে থামিয়েছিল। তখন ওই অঞ্চলের সমুদ্র চলাচলের উপযোগী ছিল, আর যে-প্রণালীকে শুনেছি তোমরা হারকিউলিসের পিলার বলে ডাকো তার সামনে একটা দ্বীপ ছিল। এই দ্বীপ আফ্রিকা ও এশিয়া একসাথে করলে যত বড় হবে তার চেয়েও বড় ছিল, আর তখন অভিযাত্রীরা সেখান থেকে অন্য অনেক দ্বীপে যেতে পারত, যেখান থেকে তারা পৌঁছাতে পারত সেই মহাদেশে এই মহাসাগর ঘিরে আসলেই যার অস্তিত্ব আছে। ২৫কারণ প্রণালীর ভিতরের যেসব জায়গার কথা আমরা বলছি তা এমন একটা হার্বারের মতো যার প্রবেশপথ অনেক সরু, কিন্তু প্রণালীর বাইরের সমুদ্র আসলেই মহাসাগর, আর তাকে বেষ্টন করা ভূমিকে যথার্থ ও নির্ভুলভাবেই মহাদেশ বলা যায়।

এই আটলান্টিস দ্বীপে এক বিশাল ও বিস্ময়কর রাজশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা এই পুরো দ্বীপ, আরও অনেক দ্বীপ এবং মহাদেশটিরও একাংশ শাসন করত। এর চেয়েও বড় কথা, তারা প্রণালীর ভিতরে আফ্রিকার মিশর পর্যন্ত এবং ইউরোপের তুস্কানি পর্যন্ত অঞ্চলেও শাসন কায়েম করেছিল। এক সময় এই পুরো রাজ্য একটি শক্তি হিসেবে একীভূত হয়েছিল এবং মাত্র এক আক্রমণে তোমাদের দেশ, আমাদের দেশ, এমনকি প্রণালীর ভিতরের পুরো এলাকায় দাসত্বের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। সোলন, ঠিক তখনই তোমাদের নগরীর ক্ষমতা মানবজাতির সামনে উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ পায় উৎকর্ষে ও শক্তিতে, যখন সে আত্মার মহত্বে ও সামরিক দক্ষতায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। প্রথমে সে গ্রিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়, কিন্তু যখন অন্য সবাই তাকে ছেড়ে চলে যায় তখন একা দাঁড়িয়ে থেকে চরম বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল, কিন্তু শেষে শত্রুদের পরাজিত করে নির্মাণ করেছিল এক স্মৃতিসৌধ। যারা তখনও দাস হয়নি তাদেরকে সে রক্ষা করেছিল; আর হারকিউলিসের পিলারের ভিতরে যারা বাস করত, তাদের সবাইকে অকুণ্ঠভাবে দিয়েছিল মুক্তি।

কিছুদিন পর এক ভয়াবহ ভূমিকম্প ও মহাপ্লাবন ঘটে, এবং ভয়ংকর এক দিন ও রাতের মধ্যে তোমাদের পুরো যোদ্ধা শ্রেণি হঠাৎ পৃথিবীর গভীরে তলিয়ে যায়। একইভাবে আটলান্টিস দ্বীপটিও সমুদ্রের নিচে ডুবে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই কারণে সেই অঞ্চলের সমুদ্র এখন আর নৌযাত্রার উপযোগী নেই, সেদিক দিয়ে চলা যায় না কারণ ডোবার সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের ঠিক নিচে দ্বীপটির রেখে যাওয়া কাদামাটিতে পথ আটকে গেছে।

এখন, সক্রেটিস, তুমি সোলনের শোনার উপর ভিত্তি করে প্রবীণ ক্রিটিয়াসের দেয়া সেই গল্পের সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি শুনলে। তবে গতকাল যখন তুমি নাগরিক-সমাজ আর যেসব মানুষ নিয়ে কথা বলছিলে, আমি তার সাথে আমার এই মাত্র বলা সবকিছুর মিল দেখে অবাক হয়েছিলাম, কারণ বুঝতে পেরেছিলাম কোনো এক মিরাকল বা চান্সে তোমার বর্ণনার সাথে সোলন যা বলেছিল তার অনেক ঐকমত্য। ২৬আমি তখনি কিছু বলতে সংকোচ করেছিলাম, কারণ গল্পটা বহুদিন আগের, আর আমি তখনো পুরোপুরি সব মনে করতে পারিনি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আগে সবকিছু নিজের কাছে সঠিকভাবে স্মরণ করতে হবে, তারপর গল্পটা বলতে হবে। সেই কারণেই গতকাল তোমার দেওয়া দায়িত্ব দ্রুত গ্রহণ করেছিলাম, কারণ তখন আমার মনে হয়েছিল এই ধরনের সব পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় কাজ এমন বক্তব্য দেওয়া যাতে উদ্দেশ্যের সঙ্গে মানানসই, এবং আমরা তখন তার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত ছিলাম। সুতরাং, যেমন হারমোক্রেটিস বলেছে, আমি এখান থেকে যাওয়ার সাথেসাথেই ওদেরকে আমার মনে হওয়া গল্পটা বলেছিলাম এবং তারপর রাতে একা একা আবার তা নিয়ে ভেবে প্রায় সবকিছুই মনে করতে সক্ষম হয়েছিলাম। সত্যি বলতে, যেমনটা বলা হয়, স্মৃতির উপর শৈশবের শিক্ষার প্রভাব অনেক বেশি। আসলে আমি জানি না গতকাল শোনা সবকিছু এখন মনে করতে পারব কি না, কিন্তু খুবই অবাক হব যদি অনেক দিন আগে শোনা সেই গল্পের একটা অংশও আমার স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। আমি সেই সময় এতটাই আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের সাথে গল্পটা শুনেছিলাম, আর সেই বৃদ্ধও আমাকে এত উৎসাহ নিয়ে শিখিয়েছিলেন আমার অবিরাম প্রশ্নের কারণে, যে গল্পটি আমার মনে আগুনে পুড়িয়ে খোদাই করা অক্ষরের মতো অক্ষয় হয়ে গেছে। এমনকি আমি আজ সকালে এখানে আমাদের সঙ্গীদেরও এই কথাগুলো বলেছি, যাতে তাদের কাছেও গল্প বলার জন্য পর্যাপ্ত উপাদান থাকে।

তাহলে, সক্রেটিস, এখন আমি ব্যাখ্যা করতে প্রস্তুত কেন এই সব বলেছি—শুধু সংক্ষেপে নয়, বিশদভাবেও, যেমনটা আমি শুনেছিলাম। এখন আমরা তোমার গতকালের বলা নাগরিক-সমাজ ও নগরীকে মিথ হিসেবে নয়, বরং বাস্তব কোনো পরিস্থিতিতে উপস্থাপন করব, যেন সেই নগরী এখানেই উপস্থিত, যেন এথেন্সই সেই নগরী। আর যেসব নাগরিকদের তুমি কল্পনা করেছিলে তাদেরকে আমরা মিশরীয় পুরোহিতদের বলা আমাদের প্রকৃত পূর্বপুরুষ হিসেবে ঘোষণা করব। দুই গল্প খুব সঙ্গতভাবে মিলে যাবে, এবং আমরা এই ঘোষণায় কোনো অসঙ্গত সুর রাখব না যে তোমার নাগরিকরাই সেই প্রাচীন এথেনিয়ান। আমরা একসঙ্গে কাজ করে, প্রত্যেকে যার যার অংশ পালন করে, যথাসাধ্য চেষ্টা করব তোমার দেওয়া কাজের যথাযথ উত্তর দেওয়ার। তাহলে, সক্রেটিস, এখন ভেবে দেখো, আমাদের এই গল্প তোমার ইচ্ছার সাথে মিলছে, নাকি আমাদের অন্য কোনো গল্প খোঁজা উচিত।

সক: কেন, ক্রিটিয়াস, এই গল্পের বদলে আর কোন গল্প বাছা যায় যেখানে এটা দেবীর উৎসবের জন্য এত উপযুক্ত এর সাথে সরাসরি তার যোগসূত্র থাকার কারণে? তাছাড়া আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটা কোনো কল্পিত গল্প নয়, সত্য ঘটনা। এই গল্প যদি ছেড়ে দিই, আর কোথায় কীভাবে বিকল্প খুঁজে পাব? সেটা অসম্ভব; সুতরাং তোমাদের বলতে হবে, আর শুভকামনা রইল; আমি এখন চুপ থাকব, আমার শুধু শোনার পালা, গতকাল আমার বলার ভূমিকার ঠিক বিপরীত। ২৭

ক্রিট: দেখো তবে, সক্রেটিস, আমরা তোমার জন্য ভোজের কি অর্ডার সাজিয়েছি! আমাদের মনে হয়েছে টিমেয়াসের প্রথমে কথা বলা উচিত, কারণ সে আমাদের মধ্যে সেরা জ্যোতির্বিদ এবং মহাবিশ্বের প্রকৃতি বোঝাকে তার প্রধান কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সে মহাবিশ্বের সৃষ্টি দিয়ে শুরু করবে আর মানুষের প্রকৃতি দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করবে। এর পরে আমি এমনভাবে এগিয়ে আসব যেন টিমেয়াসের কাছ থেকে পেয়ছি তার গল্পে বানানো সাধারণ মানুষ, আর তোমার কাছ থেকে পেয়েছি এমন কিছু মানুষ যারা বিশেষভাবে শিক্ষিত। এবং এদেরকে আমাদের সামনে আনব বিচারকের সামনে আনার মতো করে, সোলনের বর্ণনা ও তার আইন অনুযায়ী, এবং তাদেরকে আমাদের এই নগরীর নাগরিক করে তুলব, যেহেতু আসলে এরাই সেই প্রাচীন এথেনিয়ান যাদের বিলুপ্তির কথা প্রাচীন মিশরীয় নথিতে লিপিবদ্ধ আছে। এর পর থেকে আমি গল্পটা চালিয়ে যাব এথেন্সের নাগরিকদের গল্প হিসেবে।

সক: মনে হচ্ছে আমি সম্পূর্ণ ধার ফেরত পাব আলোচনার এক জমকালো ভোজের মাধ্যমে। এখন, টিমেয়াস, মনে হচ্ছে তোমারই এবার কথা বলার পালা, তবে শুরুর আগে প্রচলিত রীতিতে দেবতাদের আবাহন করা দরকার।

টিমেয়াসের প্রস্তবনা

টিম: ঠিক তাই, সক্রেটিস, যার মধ্যে সামান্যতম বিচক্ষণতাও আছে সে-ই বড় বা ছোট যেকোনো কাজে হাত দেওয়ার আগে সবসময় আমার ধারণা ঈশ্বরকে ডেকে নেয়। আর আমরা যারা বক্তব্য দিতে যাচ্ছি গোটা ইউনিভার্স নিয়ে, সে উৎপন্ন জিনিস না কি অনুৎপন্ন সেই বিষয়ে, এই আমরা যদি সঠিক পথে থাকতে চাই তবে অবশ্যই দেব-দেবীদের আবাহন করতে হবে এবং দোয়া করতে হবে যেন আমাদের কথা বিশেষভাবে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, আর গুরুত্বে অনেক ছোট হলেও আমাদের কাছেও যাতে গ্রহণযোগ্য হয়। এখন এই হোক দেবতাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, তবে তাকেও আহ্বান করতে হবে যা আমাদের নিজের, যাতে তোমরা সহজে শিখতে পারো এবং আমি যাতে আমাদের সামনের বিষয়গুলো যতটা সম্ভব পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি।

আমার মতে আমাদেরকে প্রথমে অবশ্যই এই পার্থক্যটি করতে হবে: কী সবসময় থাকে এবং কখনো হয় না, আর কী সব সময় হয় এবং কখনো থাকে না? ২৮প্রথমটি যেহেতু সব সময় একই থাকে সেহেতু তা বোধের (নাউস, ইন্টেলেক্ট) কার্যক্রমের মাধ্যমে বোঝা যায়, আর দ্বিতীয়টি বুঝা যায় মত বা বর্ণনাবিহীন অনুভূতির মাধ্যমে, এটি উৎপন্ন হয় ও বিলুপ্ত হয়, কিন্তু কখনো আসলে থাকে না। আবার, যা-কিছু উৎপন্ন হয় তা কোনো কারণ থেকে উৎপন্ন হতে হবে, যেহেতু কোনো কিছুই কারণ ছাড়া উৎপন্ন হতে পারে না। এখন একজন কারিগর যখন সব সময় অপরিবর্তনীয় কিছু দেখেন এবং সেটাকে তার মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন, তখন তিনি তার রূপ ও চরিত্র পুনর্নির্মাণ করবেন, এবং এভাবে তিনি যা-কিছু তৈরি করবেন তা অবশ্যই সুন্দর হবে। কিন্তু যদি তিনি এমন কিছু দেখেন যা উৎপন্ন হয়েছে এবং যদি কোনো উৎপন্ন মডেল ব্যবহার করেন, তাহলে সেই প্রডাক্ট সুন্দর হবে না।

এখন, ইউনিভার্স মহাবিশ্ব বা কসমস সম্পর্কে প্রথমে একটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন: আসলে তা সহজে যে-নামই গ্রহণ করবে তাকে আমরা সে-নামেই ডাকতে পারি। এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন যা যেকোনো জিনিসের আলোচনা শুরুর আগে বিবেচনা করা উচিত: এটা কি কোনো উৎপত্তি ছাড়া সবসময় ছিল, নাকি কোনো সূচনা থেকে উৎপন্ন হওয়ার মাধ্যমে এসেছে? এটা অবশ্যই উৎপন্ন হয়েছে, কারণ সে দৃশ্যমান, স্পর্শযোগ্য, তার একটা শরীর আছে, এবং এ ধরনের সবকিছুই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, আর সব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু মত ও অনুভূতির মাধ্যমে ধরা যায় এবং, আগেই যেমন দেখেছি, এরা অস্তিত্বে আসে, উৎপন্ন হয়। তাছাড়া আমরা বলি যা-কিছু উৎপন্ন হয়েছে তা অবশ্যই কোনো কারণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এখন এই মহাবিশ্বের নির্মাতা ও মাতাকে আবিষ্কার করা সত্যিই কঠিন কাজ, এবং আবিষ্কারের পরও তাকে অন্য সবার কাছে বর্ণনা করা অসম্ভব।

যাই হোক, মহাবিশ্ব বিষয়ক একটি প্রশ্ন আমাদের আবারও বিবেচনা করতে হবে: কারিগর কোন মডেলের উপর ভিত্তি করে এটা তৈরি করেছিলেন? যা একই থাকে ও কখনো পাল্টায় না তার সাপেক্ষে, নাকি ২৯কোনো উৎপন্ন মডেলের সাপেক্ষে? যদি এই মহাবিশ্ব সত্যিই সুন্দর হয় এবং এর কারিগর যদি ভালো হন, তাহলে স্পষ্টতই তিনি চিরস্থায়ীর দিকে তাকিয়েছিলেন; অন্যথায়, যদি তা না হতো (কেউ এটা বৈধভাবে বলতে পারে না) তাহলে তিনি এমন একটি মডেলের দিকে তাকিয়েছিলেন যা উৎপন্ন হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই সবার কাছে স্পষ্ট যে মডেলটি চিরস্থায়ী ছিল, কারণ মহাবিশ্ব সব সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আর তার কারিগর হচ্ছেন সব কারণের মধ্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। অতএব এইভাবে উৎপন্ন হওয়ার পর তাকে সেই জিনিসের অনুরূপ করা হয়েছে যা যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে বোঝা যায় এবং একই থাকে। তার উপর, এই যদি সত্য হয় তবে এটাও একদম আবশ্যক যে এই ইউনিভার্সকে অন্য কোনো কিছুর ইমেজ (ছবি) হতে হবে।

এখন যেকোনো বিষয়ে স্বাভাবিক সূচনা থেকেই শুরু করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদেরকে ইমেজ ও তার মডেলের মধ্যে একটা পার্থক্য করতে হবে: ব্যাখ্যা সবসময় সে যার ব্যাখ্যা তার মতো হয়, সুতরাং যেকোনো স্থির ও নিশ্চিত জিনিস যা বোধের মাধ্যমে বোঝা যায় তার ব্যাখ্যাকেও ধ্রুব ও পরিবর্তনহীন হতে হবে, এবং এরকম ব্যাখ্যাগুলিকে অবশ্যই অখণ্ডনীয় ও অবিসংবাদিত হতে হবে, ভাষাভিত্তিক কোনো ব্যাখ্যার পক্ষে যতটা সম্ভব ততটাই। কিন্তু সেই মডেল থেকে যা কপি করা হয়েছে তা এই কারণে কেবল একটা লাইকনেস (আদল), তাই তার ব্যাখ্যাও হতে পারে কেবল লাইকলি (সম্ভব) এবং অন্য সব ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত: যেমন অস্তিত্বের সাথে উৎপত্তির, থাকার সাথে হওয়ার সম্পর্ক, তেমনই সত্যের সাথে বিশ্বাসের সম্পর্ক। তাই অবাক হয়ো না, সক্রেটিস, যদি অনেক ক্ষেত্রে দেবতা বা মহাবিশ্বের সৃষ্টির মতো বিষয়ে আমরা এমন ব্যাখ্যা বানাতে ব্যর্থ হই যা সম্পূর্ণভাবে সব দিক দিয়ে নিজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও সঠিক। আসলে আমরা যদি এমন কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারি যা অন্য যেকোনো ব্যাখ্যার সমান সম্ভাব্য তাহলেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে: যে-আমি বলছি আর যে-তোমরা বিচার করছ, আমাদের সবার প্রকৃতি হলো মানুষের প্রকৃতি, সুতরাং এই সব বিষয়ে সম্ভাব্য গল্প গ্রহণ করে তার বাইরে আর কিছু খোঁজা উচিত না।

সক: চমৎকার, টিমেয়াস, সত্যিই তুমি যেমন বলছ, আমাদের এটা কোনো শর্ত ছাড়াই গ্রহণ করতে হবে। আমরা আগ্রহভরে তোমার প্রস্তাবনাটি মুগ্ধতার সঙ্গে গ্রহণ করেছি, সুতরাং এখন মূল বিষয়ে এগিয়ে যাও।

টিমেয়াসের ব্যাখ্যা

টিম: ঠিক আছে, তাহলে আমরা উল্লেখ করি কারিগর কেন উৎপত্তি আর মহাবিশ্ব বানিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভালো, এবং ভালোর মধ্যে কখনো কোনোকিছু নিয়ে ঈর্ষা জাগে না, আর ঈর্ষা ছিল না বলে তিনি ইচ্ছা করেছিলেন সবকিছু যতটা সম্ভব তার মতো হোক। সুতরাং বোধসম্পন্ন মানুষদের থেকে আমরা যদি এই কথা গ্রহণ করি যে এটাই উৎপত্তি ও মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ উৎস, তাহলে কোনো ভুল হবে না। ৩০কারণ গড ইচ্ছা করেছিলেন সবকিছু গুড হোক এবং যতটা সম্ভব কোনকিছুতেই কোনো খুঁত না থাকুক। তাই তিনি দৃশ্যমান যা-কিছু বিশৃঙ্খল ও এলোমেলোভাবে চলছিল তা সব নিয়ে তাদেরকে বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসেন, কেননা তার কাছে বিশৃঙ্খলার চেয়ে শৃঙ্খলা সম্পূর্ণরূপে শ্রেয় ছিল। তবে তখনও এবং এখনও সর্বোচ্চ ভালোর পক্ষে এমন কিছু সৃষ্টি করা আইনসম্মত না যা সর্বোচ্চ সুন্দর নয়। তাই চিন্তাভাবনা করে তিনি আবিষ্কার করলেন যে যা কিছু স্বভাবত দৃশ্যমান তাদের মধ্যে বোধ ছাড়া যারা তৈরি তারা মোটের উপর কখনোই বোধযুক্ত কিছু থেকে ভালো হতে পারে না। এবং আত্মা না থাকলে কোনো কিছুর মধ্যে বোধ থাকতে পারে না। এই ভাবনার উপর ভিত্তি করে তিনি বোধকে আত্মায় এবং আত্মাকে দেহে স্থাপন করে মহাবিশ্ব নির্মাণ করেছিলেন, যাতে এটি সম্পূর্ণ হলে প্রাকৃতিকভাবেই সম্ভাব্য সবচেয়ে সুন্দর ও উৎকৃষ্ট হয়। সুতরাং সম্ভাব্য বর্ণনার উপর ভিত্তি করে আমাদের বলতে হবে, এই মহাবিশ্ব আত্মা ও বোধ সম্পন্ন একটি জীবন্ত সত্তা যা প্রকৃতপক্ষে খোদার বিধানের মাধ্যমে অস্তিত্বে এসেছে।

এই পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত যথাযথ ধারাবাহিকতায় পরের বিষয়গুলো উল্লেখ করা: কোন জীবের আদলে নির্মাতা কসমস নির্মাণ করেছিলেন? আমরা একে এমন কিছুতে নামিয়ে আনতে পারি না যার স্বভাবতই অংশ আছে, কারণ তা অসম্পূর্ণ, এবং অসম্পূর্ণ কিছুর আদল কখনোই সুন্দর হতে পারে না। বরং আমাদের প্রস্তাব হলো, মহাবিশ্ব সবার আগে এমন কিছুর মতো অন্য সব জীবের প্রজাতি ও শ্রেণি, এককভাবে বা ক্যাটাগরির ভিত্তিতে, যার অংশ। আসলে সেই মহাবিশ্ব নিজের মধ্যে বোধের মাধ্যমে বোঝা যায় এমন সব জীবকে ধারণ করে, ঠিক যেমন এই মহাবিশ্ব দৃষ্টির মাধ্যমে চেনা যায় এমন সব প্রাণী এবং আমাদেরকেও ধারণ করে। এই খোদা চেয়েছিলেন মহাবিশ্ব যেন বোধের উপলব্ধি করা সব জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও সম্পূর্ণ নিখুঁত কিছুর মতো হয়, তাই তিনি একটি একক দৃশ্যমান জীবন্ত সত্তা তৈরি করেছিলেন, যে স্বভাবের দিক দিয়ে তার স্বজাতির সব জীবকে নিজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে।

৩১আমরা কি একটা একক ইউনিভার্স নিয়ে কথা বলে ঠিক করেছি, নাকি আরও সঠিক হবে অনেকগুলো, এমনকি অসীম সংখ্যকের কথা বলা? যদি সেই মডেল অনুসারে তৈরি হয়ে থাকে, তবে তাকে এককই হতে হবে। কারণ বোধের মাধ্যমে চেনা সব জীবকে যে অন্তর্ভুক্ত করে সে কখনো জোড়ায় থাকতে পারে না। যদি পারত তাহলে উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরেকটি জীবন্ত সত্তার প্রয়োজন হতো এবং তখন এই দুটি সেই জীবন্ত সত্তার অংশ হয়ে যেত। তখন এটা বলা বেশি ঠিক হতো যে মহাবিশ্ব দুটি জীবের মতো নয়, বরং সেই জীবের মতো যে উভয়কেই ধারণ করে। তাই সে যাতে অনন্যতার দিক থেকে সম্পূর্ণ নিখুঁত এই সত্তার মতো হয়, সেজন্য নির্মাতা দুটি বা অসীম সংখ্যক ইউনিভার্স (মাল্টিভার্স) নির্মাণ করেননি, বরং একমাত্র এই অন্তরীক্ষই অস্তিত্বে এসেছে, সে একক ছিল, এবং একক থাকবে ভবিষ্যতেও।

এখন যা-কিছু উৎপন্ন হয়েছে তাকে অবশ্যই দৈহিক রূপ ধারণ করতে হবে এবং দৃশ্যমান ও স্পর্শযোগ্য হতে হবে, কিন্তু কিছুই কখনো দৃশ্যমান হতে পারে না আগুন ছাড়া, স্পর্শযোগ্য হতে পারে না কঠিন পদার্থ ছাড়া, আর কঠিন পদার্থ হতে পারে না মাটি ছাড়া: সুতরাং খোদা যখন মহাবিশ্বের দেহ নির্মাণ শুরু করেন, তখন তা তিনি বানিয়েছিলেন আগুন ও মাটি দিয়ে। এখন দুটি জিনিস একসঙ্গে ভালভাবে সংযুক্ত হতে পারে না তৃতীয় কিছু ছাড়া, কারণ তাদেরকে একের মধ্যে টানার জন্য একটা বন্ধন লাগে। সবচেয়ে ভালো বন্ধন তাই যা নিজেকে এবং সমন্বিত বস্তুগুলিকে যতটা সম্ভব এক করে তোলে; এবং এই কাজ সবচেয়ে ভালো করতে পারে অনুপাত। যেমন, যখন তিনটি সংখ্যা বা আয়তন বা ক্ষমতার মধ্যে মধ্য উপাদান এমন হয় যে প্রথমটির অনুপাত মধ্যের সঙ্গে যেমন, মধ্যের অনুপাত শেষটির সঙ্গে তেমন এবং আবার শেষটির অনুপাত মধ্যের সঙ্গে যেমন মধ্যের অনুপাত প্রথমটির সঙ্গে তেমন, তখন মধ্যটিই হয়ে ওঠে প্রথম ও শেষ এবং শেষ ও প্রথম উভয়েই হয়ে ওঠে মধ্য। এর ফলে আবশ্যিকভাবেই তারা সবাই সমান হয়ে যায়, এবং একে অপরের মতো হয়ে ওঠার কারণে তারা হয়ে যাবে এক।